বাংলাধারা ডেস্ক »
সারাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ভর্তির সংখ্যা কমলেও কিন্তু গ্রাম গঞ্জে প্রকোপ আকার ধারণ করেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আরও এক হাজার ৪৬০ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল শনিবার ঢাকা-ফরিদপুরে মারা গেছে আরও পাঁচ। তবে আগামী ৭ দিন চ্যালেঞ্জিংয়ের।
এদিকে তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বন্ধের দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও তুলনামূলক কমে প্রায় সব হাসপাতালে। ঢাকায় এই সংখ্যা কমে অনেক বেশি, যদিও ঢাকায় কয়েক দিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে কমছে ভর্তির সংখ্যা।
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কলেজছাত্র সুমন বাশার রাজুর (২২) মৃত্যু হয়েছে।
তিনি মাগুরার চাঁদপুর গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। সুমন মাগুরা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে গত সোমবার ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
একই হাসপাতালে গতকাল সন্ধ্যায় ইউনুস শেখ (৫৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার বাড়ি রাজবাড়ীর সুলতানপুর গ্রামে। তিনি গত সোমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভোরে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে মারা গেছেন গৃহবধূ লিপি রানী দাস (২২)। লিপি রানী পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রতনদীতালতলী ইউনিয়নের নিমহাওলা গ্রামের বিমল চন্দ্র দাসের স্ত্রী।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল রাতে সিরাজগঞ্জের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান (১৮)। তিনি কামারখন্দের হালুয়াকান্দি গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে।
এ ছাড়া গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মনোয়ারা বেগম (৪৫) নামের এক ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। মনোয়ারা কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার সাইফুল ইসলামের স্ত্রী।
নিহত স্ত্রীর বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিল মনোয়ারা। স্থানীয় ভাগলপুর হাসপাতালে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার সময় অবস্থার অবনতি হলে গত মঙ্গলবার তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে আইসিইউতেও নেওয়া হয়েছিল।’
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমাদের কাছে এ পর্যন্ত ৭০ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য এসেছে। এর মধ্যে আমরা সব প্রটোকল মেনে ৪০ জনের মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু ছিল বলে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পেরেছি। বাকিদের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত ফল পাওয়া যায়নি।
যাচাই-বাছাইয়ের সময়ে অনেক তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করতে হয়, মৃতদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও তথ্য-উপাত্ত নিতে হয়। ফলে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে সময় লেগে যায়। তাই এটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গতকাল সকাল ৮টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৪৬০ জন, যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল এক হাজার ৭১৯ জন (১৫ শতাংশ কম) এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে এক হাজার ৩২৪ জন, আগের ২৪ ঘণ্টায় যে সংখ্যা ছিল এক হাজার ৫৭৩।
এর মধ্যে গতকাল সকাল ৮টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় নতুন ভর্তি হয়েছে ৬২১ জন, যা আগের দিন ছিল ৭৫৯ (১৮ শতাংশ কম) এবং ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি হয়েছে ৮৩৯ জন, যা আগের দিনে ছিল ৯৬০ জন (১৩ শতাংশ কম)।
গতকাল সকালে সারা দেশে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল সাত হাজার ৮৫৬। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে চার হাজার ৪৩ জন এবং ঢাকার বাইরে তিন হাজার ৮১৩ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৪৭৬। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪৩ হাজার ৫৮০ জন।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম/আরইউ













