২৬ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা-চট্টগ্রামে রাতের ট্রেনগুলো অনিরাপদ !

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল রুটে তূর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেস ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। অনির্ধারিত স্টপেজ দিয়ে বিনা টিকেটে যাত্রীদের কাছ থেকে চলছে অর্থ বাণিজ্য। এমন যাত্রা বিরতির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে যাত্রীরা। ট্রেনের চালক, সহকারি চালক, গার্ড, টিটি ও জিআরপি সদস্যরা সিন্ডিকেট করেই এ ধরনেরে বাণিজ্য চালাচ্ছে বলে প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলেছে। কারণ, নির্দিষ্ট স্টেশন ছাড়াও রাতের এইসব ট্রেন অনির্দিষ্ট কিছু স্টেশনে থেমে যাত্রী উঠানামা করছে অর্থের বিনিময়ে।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু তূর্ণা নিশিতা ট্রেনই নয়, রাতের বেলায় চলাচলরত ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে উদয়ন এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন অনির্ধারিত ভাবে থামছে। বিশেষ করে কুমিল্লার শশীদল, রাজাপুরসহ কয়েকটি মাদক অভয়ারণ্য এলাকায় অনির্ধারিত যাত্রা বিরতি করে মেইল ট্রেনগুলোতে মাদকের চালান তোলা হচ্ছে। আবার নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেনটি গন্তব্যে পৌছালে পথিমধ্যে অনির্ধারিত যাত্রাবিরতির হিসেব রাখে না কন্ট্রোল বিভাগ। এই সুযোগে চালক থেকে পরিচালক পর্যন্ত সকলেই বিনা টিকেটীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কুমিল্লা রেল স্টেশনের সিজিপিওয়াই লোকশেডের এলএম মোশারফ হোসেনকে দুস্কৃতিকারীরা ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটিয়েছে। অনির্ধারিত যাত্রা বিরতি নিশ্চিত করতে না পারায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে রেলের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলীয় জিএম আবদুল হাইকে অবহিত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এরপর ওই বছরের ২০ নবেম্বর যাত্রী ও চালকসহ রেল কর্মচারীদের নিরাপত্তা চেয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এমন স্মারকলিপে শেষ পর্যন্ত ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়েছে। ফলে দীর্ঘ পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখছে না এমন স্মারকলিপি প্রদানকারীরা।

যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, রাতে কমলাপুর স্টেশন থেকে ৭৪২নং তূর্ণ নিশিতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে আবার চট্টগ্রাম থেকে রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়। ছাড়ার কথা। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি বিমান বন্দর স্টেশনে পৌছানোর পর বেশকিছু বিনা টিকেটি যাত্রী ট্রেনে উঠে ভৈরব স্টেশনে নামে। আবার ভৈরব থেকে যাত্রী উঠে আশুগঞ্জ স্টেশনে নামে। মূলত ভৈরব কিংবা আশুগঞ্জ স্টেশনে এ ট্রেনটির নির্ধারিত কোন স্টপেজ নেই।
যাত্রীদের সন্দেহ হলে প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে এই দুটি স্টেশনে যাত্রীরা উঠানামা করেছে। এছাড়া ট্রেনটি লাকসাম স্টেশনেও থামার কথা নয়। কিন্তু লাকসাম স্টেশন থেকেও যাত্রীরা উঠানামা করে। এতেই প্রমাণ মিলেছে অনির্ধারিত যাত্রা বিরতি হলেও ট্রেন পরিচালনায় থাকা চালক থেকে শুরু করে গার্ড পর্যন্ত সকলেই বিনা টিকেটীদের পক্ষে কাজ করছে। অবৈধ অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অনির্ধারিত যাত্রা বিরতি যাত্রীদের জন্য কাল হয়ে দাড়াচ্ছে।

এছাড়াও শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বাথগুলোর করিডোরের সম্মুখভাগ অর্থাৎ দরজায়, স্নিগ্ধা চেয়ার কোচের দরজার সামনে এমনকি নন এসি কোচগুলোতে স্ট্যান্ডিং অবস্থায়ও যাত্রী চলাচল করছে বিনা টিকেটে। খাবার গাড়ি ও নামাজের কক্ষ এমনকি গার্ড ব্রেকেও রাতের এসব ট্রেনে বিনা টিকেটে যাত্রীর কাটতি নেই। এর কারণ হচ্ছে ট্রেনের চালক থেকে পরিচালক পর্যন্ত এমনকি জিআরপি সদস্যরাও বিনা টিকেটিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে অর্থ। এমনকি তাৎক্ষণিক ভাগবাটোয়ারা করছে এমন অবৈধ অর্থ।
পাহাড়তলীস্থ রেলওয়ে কন্ট্রোল সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসার পর বিমান বন্দর স্টেশন, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী ও সর্বশেষ চট্টগ্রাম এসে পৌছার কথা। একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া তুর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি নির্দিষ্ট স্টেশনে যাত্রা বিরতি করার কথা।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন