৮ ডিসেম্বর ২০২৫

তাফসিয়ার রোগ ধরতে পারছেন না চিকিৎসকরা!

বাংলাধারা ডেস্ক »

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার গোডাউন পাড়া মহল্লার সাড়ে চার বছর বয়সী শিশু তাসফিয়া জাহান মুনিরা জন্মগতভাবেই বিরল রোগে আক্রান্ত। ঠিক কী রোগে তাসফিয়া আক্রান্ত তা বলছে পারছেন না চিকিৎসকরাও। তার শরীরজুড়ে রয়েছে পশুর মতো ঘন কালো পশম। দিন যতই গড়াচ্ছে পশমগুলো ততো বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে অসহ্য যন্ত্রণাও।

এদিকে, মেয়ের বিরল এই রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার মা-বাবার। অর্থাভাবে মেয়ের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না তারা। তাই তারা তাকিয়ে আছেন সমাজের বিত্তবানদের দিকে।

দিনমজুর মাসুদুজ্জামান মামুন ও তানজিলা দম্পতির দ্বিতীয় শিশু কন্যা তাসফিয়া। জন্মের পর থেকেই পিঠের ছোট্ট একটি টিউমার থেকে এই রোগের উৎপত্তি বলে জানান তাসফিয়ার মা তানজিলা খাতুন।

তাসফিয়ার মা জানান, প্রথমে শরীরে বিভিন্ন অংশে কালো তিল বা আঁচিলের মতো হয়ে এক সময় তা পশমে রূপ নিয়েছে এবং তা দিন দিন বাড়ছে।

তানজিলা খাতুন জানান, টিউমার হওয়ার পর ছয় দিনের শিশু তাসফিয়াকে নিয়ে তিনি ছুটে যান চিকিৎসকের কাছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা একটি মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্তে আসেন- এটি একটি বিরল প্রকৃতির চর্ম রোগ। এ রোগের কোনও চিকিৎসা জানা নেই তাদের। সে সময় চিকিৎসকরা তাসফিয়ার বয়স ৩-৪ বছর হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তার বয়স সাড়ে চার বছর। সমস্ত শরীর তো পশমে ছেয়ে গেছেই; তার ওপর হাতের তালু, মুখ ও মুখের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ছে।

তানজিলা খাতুন জানান, গরমের সময় তাসফিয়ার শরীরের তাপ অনেক বেশি থাকে। দিনে তিন-চারবার গোসল করাতে হয়। ভেজা কাপড় পরিয়ে দিন-রাত ফ্যানের নিচে রাখতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে হাতপাখার বাতাস করতে হয়। এভাবে না রাখলে মেয়েটি ছটফট করতে থাকে।

বিরল রোগে আক্রান্ত তাসফিয়া জাহান মুনিরা

তাসফিয়ার বাবা দিনমজুর মাসুদুজ্জামান মামুন জানান, মেয়েকে সুস্থ করতে অনেক চিকিৎসকের কাছে তিনি গিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সঠিক চিকিৎসার খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি। এছাড়া অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে।

সমাজের আর পাঁচটি শিশুর মতো তার শিশুটিও যেন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায় এমন আকুতি জানান তিনি।
মেয়ের চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে এবং সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন তাসফিয়ার বাবা মাসুদুজ্জামান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, ‘আমার ২৫ বছরের ডাক্তারি জীবনে এ ধরনের রোগ এর আগে কোনোদিন দেখিনি। এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাও এই জেলায় নেই। তবে শিশুটিকে দেখে এবং ঘটনা শুনে যা মনে হয়েছে, তার পিঠের টিউমারটি ‘হেমানজিউমা’। যা উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব। এটি বেশ ব্যয়বহুল এবং এই বয়সে ঝুঁকিপূর্ণ।

শরীরে পশুর মতো পশম বের হওয়ার সম্পর্কে ডা. জাহিদ নজরুল বলেন, ‘হয়তো এটি জেনেটিক কোনও প্রবলেম। এজন্য শিশুটির উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। আর সেটি ঢাকা অথবা দেশের বাইরে করতে পারলে ভালো হয়।’

সিভিল সার্জন বলেন,‘এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা জানার চেষ্টা করবো আসলে রোগটি কী? সেক্ষেত্রে কোনও উপায় জানা গেলে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাংলাধারা/এফএস/এমআর/এসবি

আরও পড়ুন