সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে বৃহস্পতিবারও (১৬ এপ্রিল) ৪১ জন সন্দেহজনক রোগীর করোনাভাইরাসের নমুনা টেষ্ট হয়েছে। এদের মধ্যে পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার এক বৃদ্ধের করোনা ‘পজিটিভ’ পাওয়া গেছে।
করোনা ‘পজিটিভ’ পাওয়া বৃদ্ধ ব্যক্তি সম্প্রতি তাবলীগের চিল্লা শেষে খুলনা থেকে ঢাকা হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। তার মধ্যে করোনার কোন উপসর্গ দেখা না দিলেও শুধু বাইরে থেকে আসায় তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তার সাথে পরীক্ষা করা বাকি ৪০ জনের রিপোর্ট বরাবরের মতোই ‘নেগেটিভ’ এসেছে। ইতিপূর্বে ‘ক্রসচেক’ করতে চট্টগ্রামে পাঠানো ৮টি নমুনার ফলাফলও ‘নেগেটিভ’ পাওয়া যায়।
৬৫ বছর বয়সী তাবলীগ ফেরত বৃদ্ধের বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা কুলালপাড়া গ্রামে। তার শরীরে এখনো করোনার কোন উপসর্গ নেই। এরপরও তাবলীগ ফেরত বলে তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। তার সাথে আরো ৫ জন তাবলীগ থেকে ফিরেছেন। তাদেরও কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছিল এবং তাদের চেম্পলও পরীক্ষায় পাঠানো হয়। তাদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
এদিকে, তাবলীগ ফেরত ঐ বৃদ্ধের করোনা পজেটিভ আসার খবর পেয়ে নাইক্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবি সদস্যরা বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কুলালপাড়ার সবকটি বাড়ি এবং এলাকা লকডাউন করেছে।
নাইক্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সেলিম উদ্দিন জানান, মাত্র তিনদিন আগেই ওই বৃদ্ধ তাবলীগ শেষে বাড়ি ফিরেন। তার শরীরে করোনার উপসর্গ না থাকলেও কােনা পজেটিভ এসেছে। মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা ১৫-২০টি বাড়ি নিয়ে গড়া কুলালপাড়ার সবকটি বাড়িই লকডাউন করা হয়েছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মো. শাহজাহান নাজির জানিয়েছেন, চালু হওয়ার ১৬ দিনে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ২৯১ জন সন্দেহজনক রোগীর করোনা টেষ্ট হয়েছে। যাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার তাবলীগ ফেরত নাইক্ষ্যংছড়ির একজনের রিপোর্ট-ই কেবল পজিটিভ পাওয়া গেল ।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারি অধ্যাপক ডা. রুপস পাল ও ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মো. শাহজাহান নাজির জানান, বুধবার (১৪ এপ্রিল) কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরসহ জেলার ৮ উপজেলা ও পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ফ্ল্যু সেন্টার থেকে মাত্র ৪১ জন সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর ওই সব নমুনা সকাল থেকে বিকেলের পর্যন্ত টেষ্ট করা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির একজন ছাড়া অন্য সবার নমুনারই রিপোর্ট ছিল ‘নেগেটিভ’।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, কক্সবাজার ল্যাবে প্রতিদিন ৯৬ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও উপজেলা পর্যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ নমুনা আসছে না। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা করা ৪১টি নমুনারই প্রতিবেদন ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকেই আনুষ্টানিক ভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবটিকে ঢাকাস্থ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্টান (আইইডিসিআর) করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নির্ধারণ করেছে। গত পহেলা এপ্রিল থেকে ল্যাবটি চালু হয়েছে। এরপর প্রথম ৬ দিনে ২৪ জন, ৭ এপ্রিল ২৫, ৮ এপ্রিল ২৪ জন, ৯ এপ্রিল ২৭ জন, ১০ এপ্রিল ৩৭ জন, ১১ এপ্রিল ৯ জন, ১২ এপ্রিল ৩২ জন, ১৩ এপ্রিল ২৪ জন, ১৪ এপ্রিল ৩১ জন, ১৫ এপ্রিল ১৭ জন ও ১৬ এপ্রিল ৪১ জন সন্দেহভাজন রোগীর পরীক্ষা করা হয়েছে এই ল্যাবে। সব মিলিয়ে পরীক্ষা হওয়া রোগী সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২৯১ জন।
অপরদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাড়া পার্বত্য এই জেলার অন্য উপজেলা গুলো থেকে সংগ্রহ করা করোনার নমুনা চট্টগ্রামে টেষ্ট করা হয়। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িও একই। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বান্দরবানের ১৩৫ জন, রাঙ্গামাটির ১০৫ জন ও খাগড়াছড়ির ৮০ জন এবং ফেনী জেলার ৭৮টি নমুনা টেষ্ট করা হয়েছে। নাইক্যংছড়ির ঘুমধুমে তাবলীগ ফেরত বৃদ্ধ ও ফেনীতে ইতালিফেরত এক প্রবাসি ছাড়া আর সব নমুনারই রিপোর্ট এসেছে ‘নেগেটিভ’।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ
				












