২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

তোপের মুখে রেলের চেকাররা, টিকিট না পাওয়ায় বাড়ি ফিরতে পারছে না অনেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকপ চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী ট্রেনের টিকিট কিনতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্টেশনের অভ্যন্তরে থাকা টিকিট চেকারদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ও রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবি বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের ওপর লাঠিচার্জ করেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় যাত্রীরা বেশ ক্ষুব্ধ হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ওপর । বাড়ি ফিরতে না পারার হতাশা যেন গ্রাস করছে যাত্রীদের চোখে মুখে। প্রথম দুয়েক দিন সব কিছু সুশৃঙ্খলভাবে চললেও এদিন সারাদিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে চিত্র যেন অনেকটাই ভিন্ন। যাত্রীরা বলছেন, অনলাইনে টিকিট নাই, আবার টিকিট ছাড়া স্টেশনেই ডুকতে দিচ্ছেন না তারা। হতাস হয়ে স্টেশনের প্রধান ফটকেই বসে পড়তে দেখা যায় ট্রেন ধরতে না পারা অনেক যাত্রীকে।

অনলাইনে টিকিট কিনতে না পারা একজন যাত্রী বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ জনগণের সুবিধার জন্য অনলাইন টিকিটের ব্যবস্থা করেছে। তবে যারা অনলাইনে টিকিট কিনতে পারছেন না তাদের কি হবে?

এই শেষ মূহুর্তে যারা বাড়ির পথে যাত্রা করছেন তাদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। ছোটো খাটো কাজ করে তাদের সংসার চলে, অনেকেই আবার গার্মেন্টস শ্রমিক। এই স্বল্প আয়ের মানুষদের বাড়ি ফেরার একমাত্র ভরসা ট্রেন। অনেক টাকা খরচ করে বাসে যাওয়ার মতো সামর্থ তাদের অনেকেরই নেই। আর তাই পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বাড়ি ফেরার উদ্দেশে সকাল থেকেই চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় করেন অনেকে। তবে টিকিট না থাকায় আনসার ও আরএনবি’র বাধায় স্টেশনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেনি তারা।

টিকিট কিনতে না পারা এবং যাত্রীদের এমন ভোগান্তি নিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত একজন টিকিট চেকারের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই টিকিট চেকার বলেন, স্টেশনে যাত্রীদের প্রচুর চাপ। খুব দ্রুত অনলাইন টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় অনেকেই টিকিট পাচ্ছেন না। তবে যাত্রীদের সুবিধার জন্য আমরা স্টেশনের ভেতরে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। সাধারণভাবে স্ট্যান্ডিং টিকিট শতকরা ২৫ ভাগ বিক্রির কথা থাকলেও যাত্রীদের সুবিধার জন্য আমরা তা বাড়িয়ে ৪০ ভাগ করেছি।

পেটের দায়ে পরিবার পরিজন ছেড়ে চাঁদপুর থেকে কাজের উদ্দেশে চট্টগ্রাম আসেন গুলজার মিয়া নামের একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। অনলাইনে টিকিট কিনতে না পারায় বেশ ক্ষুব্ধ তিনি। তিনি বলেন, আমার কাছে টাচ ওয়ালা মোবাইল নাই। আমি গরিব মানুষ, গার্মেন্টসে কাজ করে যে বেতন পাই তার অর্ধেকের বেশি বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। অল্প কিছু টাকা নিজের খরচের জন্য রাখি। ওই টাকা দিয়ে একটা টাচ ওয়ালা মোবাইল কেনা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর একটা টাচ মোবাইল না থাকার কারণে অনলাইনে টিকিট কিনতে পারি নাই।

শুধু গুলজার মিয়া নয়, ঠিক এমনটা ঘটেছে অনলাইনে টিকিট কিনতে না পারা অনেকের সাথে। নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকেরই নেই নিজের কোনো স্মার্ট ফোন। আবার যাদের আছে তাদের অনেকেই স্ব ঠিক ভাবে জানেন না স্মার্ট ফোনের ব্যবহার। আর তাই অনলাইনে টিকিট কিনতে পারেননি এই সকল নিম্ন আয়ের মানুষ।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে যাত্রিরা কোনো রকম হয়রানি ছাড়া তাদের বাড়ি ফিরতে পারে। সে জন্য ঈদ উপলক্ষে স্টেশনে চাপ কমাতে অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছি এবং সাথে সংযোজন করা হয়েছে অতিরিক্ত বগি।

আরও পড়ুন