২৪ অক্টোবর ২০২৫

‘তোর জামাইরে বাইর গর, নইলি তোরে বাইজ্জায় মারি ফেলায়্যুম’

জিয়াউল হক ইমন »

‘তোর জামাই আলাউদ্দিনেরে বাইর গর, নইলি তোরে বাইজ্জায় মারি ফেলাইয়্যুম।’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এই কথার অর্থ- তোর স্বামীকে বের কর, না হয় তোকে মেরে ফেলব। এমন হুংকার দিয়ে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছেন গৃহবধূ আফরোজা বেগম সেতু (২৭)।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানাধীন অক্সিজেনের মীরপাড়ায়।

গৃহবধূ আফরোজা বেগম সেতু অভিযোগ করে জানান, জোরপূর্বক বাসায় প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ, কিল-ঘুষি ছাড়াও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে প্রতিবেশী আবু ছায়েদ, নিলু আকতার, মামুন ও সায়েম।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) চার জনের নাম উল্লেখ করে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর স্বামী আলাউদ্দিন (৪২)।

মামলার এজাহারে তিনি জানান, ছোট ভাই অসুস্থ হওয়ায় আমি সাতকানিয়া থানা এলাকায় যাই। আমি সাতকানিয়ায় যাওয়ার খবর পেয়ে আবু ছায়েদ, নিলু আকতার, মামুন ও সায়েম আমার স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়িতে যায়।

পরে জোরপূর্বক বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে আমার স্ত্রীকে হুংকার দিয়ে বলে, ‘তোর জামাই আলাউদ্দিনেরে বাইর গর, নইলি তোরে বাইজ্জায় মারি ফেলাইয়্যুম।’ এসময় তারা আমার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এক পর্যায়ে তাকে কিল-ঘুষি ও মারধর করতে থাকেন। অন্যদিকে নিলু আকতার তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমার স্ত্রীর ডান হাতে সজোরে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

আলাউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আবু ছায়েদ, নিলু আকতার, মামুন ও সায়েমরা আমার অনুপস্থিতির খবর পেয়েই মূলত এই হামলা চালায়। তাদের চেষ্টা ছিল, আমার স্ত্রীকে হত্যা করে আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়া। কিন্তু ঘটনাস্থলে আমার এক আত্মীয় উপস্থিত থাকায় তা সম্ভব হয়নি। আমি এর বিচার চাই।

তার অভিযোগ, মূলত সম্পত্তি দখলের পায়তারা করছেন ওই চক্রটি। মামলা রুজুর পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন তিনি। তবে মামলা আমলে নেয়ায় বায়েজিদ থানা পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

আহত সেতু সেই দিনের আকস্মিক হামলার বিষয়ে বলেন, ‘মামুন চিৎকার করে বলেছে, এই তোর জামাইরে বাইর গর, নইলি তোরে বাইজ্জায় মারি ফেলায়্যুম। আবু ছায়েদ আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে আমার স্বামীকে মেরে ফেলতে খুঁজছিল। পরে সায়েম নামে এক ব্যক্তি বলেন, আজিইয়্য তোর জামাইরে মারি ফেলায়্যুম। নিলু আক্তার লোহার রোড দিয়ে আমার ডান হাতে বারবার আঘাত করে। এতে আমি গুরুতর আহত হই। সে সময় তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমার স্বামীকে মেরে ফেলা। আহত অবস্থায় সহ্য করতে না পেরে পরে ৯৯৯ কল দিলে তারা সটকে পড়ে।

ভুক্তভোগী আফরোজা আরও বলেন, পুলিশ যদি সত্যি জনগণ ও নিরীহদের বন্ধু হয় তাহলে এ হামলার বিচার পাব। নয়তো আমার পরিবারকে উল্টো ফাঁসিয়ে হয়রানি করবে। শুনেছি ডিসি স্যার ভালো মানুষ। আশা করি ন্যায় বিচার পাব।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বেআইনিভাবে লোহার রড ও ধারাল দা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে গৃহবধূকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে। এতে ডান হাতে মারাত্মক জখমের শিকার হন। সকল অভিযুক্তরা এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থানায় মামলা নিতে সিএমপি উত্তরের উপ-কমিশনারের সাক্ষাৎ চেয়েছিল ভুক্তভোগী পরিবার। উপ-কমিশার ব্যস্ত থাকায় সরাসরি দেখা করার সুযোগ পাইনি তারা। সুযোগ না পেলেও উপ-কমিশনার কার্যালয় থেকে মামলা গ্রহণে সবুজ সংকেত পান। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নিতে মুঠোফোনে থানাকে নির্দেশ দেয়ার কথা শুনেন বলে দাবি মামলার বাদীর।

পরে বায়েজিদ থানার ৩ উপ-পরিদর্শকের ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শেষে মামলা আমলে নেয় বায়েজিদ থানা পুলিশ।

হামলার বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান সিএমপি উত্তরের উপ-কমিশনার মো. মোখলেছুর রহমান।

তিনি বলেন, অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরও পড়ুন