৩ নভেম্বর ২০২৫

দাদন ব্যবসায়ী ও এনজিওর কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ—বিষপানে কৃষকের আত্মহত্যা

আনোয়ারা প্রতিনিধি  »

আনোয়ারা উপজেলায় সুদি টাকা ও এনজিওর কিস্তির টাকার পীড়াপীড়ি সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন অরুপ বড়ুয়া (৪৫) নামে এক কৃষক। রোববার (১১ এপ্রিল) রাতে চাতরী ইউনিয়নের রুদুরা গ্রামের বড়ুয়া পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

অরুপ বড়ুয়া স্থানীয় মৃত বাবু লাল বড়ুয়ার পুত্র। সকালে কৃষি জমিতে বিষ দেয়ার কথা বলে জমিতে গিয়ে অরুপ বিষপান করে। বাড়িতে আসার পর বমি করতে থাকলে পরিবারের লোকজন তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে নিহত অরুপের লাশ নিজ বাড়িতে দাহ করা হয়েছে। এসময় তার স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

অরুপের স্বজন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, চাতরী ইউনিয়নের রুদুরা গ্রামের বড়ুয়া পাড়ার নিহত অরুপ ভাড়ায় সিএনজি চালানোর পাশাপাশি বর্গা চাষ করেন। বারবার চাষাবাদে মার খেয়ে দেনায় জড়িয়ে পড়েন। পাশ্ববর্তী গিয়াস নামের এক ব্যাক্তি থেকে ২৬ হাজার টাকা প্রতি মাসে ৭ হাজার আটশত টাকা লাভের উপর সুদী নেন অরুপ। এই টাকা সুদে আসলে মিলে এক লক্ষ টাকার উপরে চলে যায়। এখন গিয়াস চক্রবৃদ্ধি হারে প্রতি হাজারে ৫০০ টাকা করে দাবী করে।

রুপনের স্ত্রী রুনা বড়ুয়া জানান, গিয়াসকে ২৬ হাজার টাকার বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। তারপরও আরো টাকার জন্য বারবার চাপ সৃষ্টি করে আসছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রুপন গিয়াস ছাড়াও এনজিও সংস্থা ব্র্যাক, প্রত্যাশী, উদ্দীপনসহ আরো বেশ কয়েকটি এনজিও থেকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা লোন নেন। এই টাকা দিতে না পারার কারণে প্রায় প্রতিদিন এনজিওর লোকজন তার বাড়িতে গিয়ে টাকা আদাযের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। এক সপ্তাহ আগে তার বাবা বাবু লাল বড়ুয়া মারা যান। সবমিলিয়ে চতুমুখী চাপ সইতে না পেরে রুপন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, বড়ুয়া পাড়ার দরিদ্র লোকজনের দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে গিয়াস সুদী ব্যবসার জাল বিস্তার করেছে। ভাল ভাল কথা বলে কিছু টাকা গছিয়ে পরে চক্রবৃদ্ধি হারে টাকা আদায় করে। দিতে না পারলে ঘরের গরুসহ বিভিন্ন দামী আসবাবপত্র নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জানতে গিয়াসের মোবাইল ফোনে কল করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ব্র্যাকের শাখা ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

আনোয়ারা এনজিও ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাশ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি অত্যন্ত অমানবিক। করোনাকালে কিস্তি আদায়ে জবরদস্তি করা যাবেনা।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ