বাংলাধারা প্রতিবেদক »
অবৈধসম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। আদালত তাকে ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকি কারনকে ২১ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। বুধবার দেওয়া রায়ে প্রদীপের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত।
সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের শ্বশুর অজিত কুমার কারন ছোট হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। কিন্তু তিনি মেয়ে চুমকিকে বাড়ি, গাড়ি অর্থ দিয়ে ‘বিরল’ ভালোবাসা দেখিয়েছেন। তবে অপর দুই ছেলে উজ্জ্বল কারন ও শিমুল কারনকে কোনো সম্পদ দান করার রেকর্ড আদালতে উত্থাপন করতে পারেননি। অজিত তার মেয়ে চুমকিকে চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটায় ‘শান্তিকুঞ্জ’ নামে দেড় কোটি টাকার সাড়ে ছয়তলা বাড়ি দান করেন। পরে মেয়েকে একটি প্রাইভেটকারও দান করেন। যদিও তার আগে প্রদীপ তার শ্বশুরকে ৯ লাখ টাকা দান করেন। অন্য স্বজনদের থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ১২০ ভরি স্বর্ণালংকার উপহার পান চুমকি। চুমকি তার ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা ঋণও পান। এভাবে বাবা, ভাই ও স্বামী একে অপরকে দান করে করে শত কোটির টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন চুমকি! যদিও এসব দানের বিপরীতে অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে না পারায় ফেঁসে গেছেন প্রদীপ ও চুমকি।
প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারন একজন গৃহিণী হয়েও বনে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক! দুদকের কাছে নিজেকে কমিশন ও মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও কোনো দলিল দিতে পারেননি তিনি। চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে একটি বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি কার ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি।
চুমকি দাবি করেছেন চট্টগ্রামের বোয়াখালীতে পাঁচটি পুকুর মাছ চাষের জন্য সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় লিজ নেন। এগুলো থেকে ১০ বছরে দেড় কোটি টাকা আয় হয় বলে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেন তিনি। তবে এর পেছনে কোনো বৈধ প্রমাণ নেই বলে দুদককে জানিয়েছেন বোয়ালখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার।
গৃহিণী চুমকি নিজেকে কমিশন ব্যবসায়ী বললেও, প্রমাণ দিতে পারেননি। ২০১৩-১৪ সালে ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে কমিশন ব্যবসা শুরুর কথা জানিয়ে ওই বছরই দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা লাভ করার দাবি করেন, কিন্তু তিনি কমিশন ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক লেনদেন- কিছুই আদালতে দাখিল করতে পারেননি। তিনি সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিল, ভাউচার, অফিস, গুদামের রেকর্ডপত্রও প্রদর্শন করতে পারেননি।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, প্রদীপ পুলিশে থাকার সময় তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হন এবং সেই টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পাহাড় গড়েন। এর বড় একটি অংশ প্রদীপ তাঁর স্ত্রী চুমকি ও শ্বশুর অজিতকে দানের মাধ্যমে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মেরিনড্রাইভ চেক পোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদখানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় একই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন ওসি প্রদীপ কুমার। পরে ঐ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয় তার।













