জিয়াউল হক ইমন »
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়লেও চট্টগ্রাম নগরীর দোকানগুলোতে মিলছে না মোড়কজাত সয়াবিন তেল। এমনকি বাড়তি দামেও পাওয়া যাচ্ছে না রান্নার অতিব প্রয়োজনীয় উপাদান এই সয়াবিন তেল। নগরীর বহদ্দারহাটসহ প্রায় প্রতিটি বাজার এবং পাড়া-মহল্লার দোকানেও চলছে ভোজ্য তেলের চরম সংকট । ভোক্তারা বলছেন, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্যে কোম্পানি ডিলার ও ব্যবসায়ীদের এসব কারসাজি।
শুক্রবার (৬ মে) নগরীর বহদ্দারহাট, কর্ণফুলী মার্কেট, চকবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট ও পাড়া-মহল্লার প্রায় শতাধিক দোকানে সরেজমিনে গিয়ে দেখে যায়, কোথাও নেই সয়াবিন তেল। কোথাও সয়াবিন তেলের ১ লিটারের কয়েকটা পলি ব্যাগ থাকলেও দাম প্যাকেটের গায়ের দামের চেয়ে অনেক বেশি।
আগ্রাবাদ পাঠানটুলি এলাকার বাসিন্দা এলএলবি পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাফিসা হক জানান, আগ্রাবাদ এলাকার বাজার ও আশেপাশের মহল্লার দোকানে নেই সয়াবিন তেল। ঈদের চতুর্থ দিন আশে পাশের ১৯টি দোকানে গিয়ে কোথাও খুঁজে পাইনি তেল। এখন রান্না-বান্না করা খুবই কষ্ট হয়ে দাঁড়াবে।
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা লুৎফুল আজম, নিঝুম, কাশেম ও মো. ইকবাল জানান, সরকার দাম বাড়ানোর পরও সয়াবিন বাজারজাত না করা দুঃখজনক। রান্নায় তেল ছাড়া চলে না। আমরা বিগত ৪/৫ দিন থেকে সয়াবিন ছাড়া চলছি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সঠিক তদারকি হলে এ সংকট কাটবে।
বহদ্দারহাট হক মার্কেটের মেসার্স বাবুল স্টোর, আরজু স্টোর, মারুফ স্টোরসহ বেশির ভাগ দোকানে নেই মোড়কজাত সয়াবিন তেল। দোকানদাররা জানান, ডিলার এবং কোম্পানি তেল সরবরাহ না করায় বাজারের কোন দোকানে সয়াবিন তেল নেই।
একটি দোকানে কয়েকটি সয়াবিন তেলের পলি থাকলেও লিটার বিক্রি করছেন ১৯৮ টাকা করে। যা প্যাকেটের গায়ের দামের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি।
তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে হক মার্কেটের মেসার্স রাউজান জেনারেল স্টোরে, ওখানে দোকানে কিছু মোড়কজাত সয়াবিন তেল দেখা গেলেও ক্রেতাদের বিক্রির জন্য নয় বলে জানান। বিষয়টি জানতে চাইলে সসত্ত্বাধিকারী সুজিত জানান, ‘আমরা সবার জন্য এই তেল স্টক করে রাখিনি, পারমেনেন্ট কাস্টমার এবং দাম বেশি দিলে বিক্রি করার জন্য রাখছি’। যেখানে সেনা কল্যাণ সংস্থার মোড়কজাত সয়াবিন তেল ৫ লিটারের গায়ের দাম ৭৬০ টাকা থাকলেও বিক্রি করছেন ৯৮০ টাকা করে। বোতলের গায়ের দাম থেকে বেশি কেন নিচ্ছেন- জানতে চাইলে বিক্রি করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।

হক মার্কেট ইউনিট-২ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও আনসারি ব্রাদর্সের সত্ত্বাধিকারী নেয়ামত উল্লাহ আনছারী জানান, ‘শুধু বহদ্দারহাটের হক মার্কেটে নয় নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, ২নং গেটের কর্ণফুলী মার্কেট, চকবাজারসহ সব মার্কেটের কোথাও সয়াবিন নেই। কারণ সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী সব কোম্পানি ডিলারদের তেল সাপ্লাই বন্ধ রেখেছে, ফলে ডিলাররা দোকানদারকে তেল দিতে পারছেন না। আমরাও ব্যবসায়িকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত, কারণ তেল ছাড়া ক্রেতারা অন্যান্য মালামাল নিতে চায়না’।
কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজের হোসেন বাংলাধারাকে বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের সরকারের ঈদ উপহার, যা ভোক্তাদের সাথে সরকারের শুভঙ্করের ফাঁকি। এটা সাধারণ জনগণ ও খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য একেবারে অন্যায্য ও অনাকাঙ্খিত। দাম বাড়ার পরও বাজারে ভোজ্য তেল না পাওয়াকে ব্যবসায়ীদের কারসাজি মনে করেন তিনি। দাম বৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি বাণিজ্যে মন্ত্রাণলয়সহ যথাযত তদারকি সংস্থা সুনজ’র দেয়া উচিত বলেও মনে করেন ক্যাবের এ সহ-সভাপতি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বাংলাধারাকে বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট থাকার কথা নয়, আমারা ঈদের আগে নিয়মিত বাজার তদারকিসহ বিভিন্ন সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বাজারে সরবরাহের তালিকা নিয়েছি। সেই অনুযায়ী ডিলার কিংবা ব্যবসায়ীরা সরবরাহ না করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৫ মে) সয়াবিন তেলের নতুন দামের অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়। আজ শুক্রবার এটি কার্যকর, যেখানে এক লিটার সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১৯৮ টাকায় এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে। এ নিয়ে গত ৪ মাসে তৃতীয়বারের মতো ভোজ্য তেলের দাম বাড়ালো সরকার। তবে গত ২০ মার্চ বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম একবার কমানো হয়েছিল। তখন বোতলজাত তেলের দাম লিটার প্রতি ৮ টাকা কমে ১৬০ টাকা এবং খোলা তেলের দাম ৭ কমিয়ে ১৩৬ টাকা করা হয়েছিল। মূলত দাম কমানোর পর থেকে বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট শুরু হয়।













