২৫ অক্টোবর ২০২৫

দাম বৃদ্ধিতে তেল উধাও

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

তেল নিয়ে তেলেসমাতিতে অতিষ্ঠ ভোক্তা। তেলের কারসাজিতে কোটিপতি আমদানীকারকরা। গত এক বছরে তেলের দাম তিনগুণ বেড়েছে সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে। তবে তেল সিন্ডিকেটের মূল হোতারা খাতুনগঞ্জ আর চাক্তাইয়ে অবস্থান নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশান নিচ্ছে না সরকার। বরং সরকার আমদানীকারকদের ভ্যাট ও ট্যাক্স মওকুফ করায় সোনায় সোহাগা তেল সিন্ডিকেট। প্রশ্ন উঠেছে কি এমন ক্ষমতা মুষ্টিমেয় সিন্ডিকেট সদস্যদের, যাদেরকে সরকারও ছাড় দিচ্ছে? কেনইবা ছাড় দিয়ে সিন্ডিকেটের মুনাফা বাড়াচ্ছে? অথচ এক বছর আগের বাজার মূল্য তালিকার সঙ্গে এখন পার্থক্য দ্বিগুণ।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারের প্রশ্রয়ে ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে প্যাকেটজাত তেলের ছাপানো মূল্য অকার্যকর করার সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। সরকার ঘোষণা না দিলে তেলের বাজারে হাহাকার হতো না। মূলত আগের কেনা তেলই অত্যধিক মুনাফা লুটে নেয়ার সুযোগ পেয়েছে সিন্ডিকেট। তেলের আর্ন্তজাতিক বাজারে যদি পরিবর্তন এসেই থাকে তা ব্যবসায়ীদের পরবর্তী আমদানীতে বৃদ্ধি পেত। কিন্তু মজুদ তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা আর ভোক্তাদের পকেট চিমিয়ে যাচ্ছে তেল কিনতে গিয়ে।

আরো অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার্স এসোসিয়েশনের সচিব স্বাক্ষরিত ৪মে এমন একটি তালিকায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে মজার বিষয় হলো প্রেস রিলিজ প্রকাশেও কারসাজি করেছে এই কর্তৃপক্ষ। কারণ তালিকাটি প্রিন্ট করা হয়েছে ৫ মে কিন্তু বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার্স এসোসিয়েশন এর সচিব ৪মে কিভাবে স্বাক্ষর করেছেন তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। আবার সরকার ৫মে তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি প্রকাশ করার আগে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার্স এসোসিয়েশনের সচিব বিষয়টি কিভাবে নিশ্চিত হলের সরকার তেলের মূল্য পরিবর্তন করছে। এতে সাধারণ মানুষের বুঝতে বাকি নেই এরাই সরকারকে মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে। আমদানীকৃত তেলের দাম কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির আগেইতো এসব তেল আমদানী করা হয়েছে।

এদিকে, সিন্ডিকেটের চাপের মুখে সরকারও দফায় দফায় তেলের মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তাকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। তৃণমূল, নি¤œবিত্ত আর মধ্যবিত্তরা এখন ফোটায় ফোটায় তেল গুণে গুণে খাচ্ছে। উচ্চমধ্যবিত্তরা এখন ৫লিটার বোতলের পরিবর্তে এক লিটারের বোতল কিনছে। তবে সরকারী চাকুরীজিবীদের ক্ষেত্রে এসব ফর্মূলা কাজ করছে না। কারণ সরাকরী আমলাদের বেতন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে আপমর জনসাধারণ ভোগান্তির মুখে। কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) কোন প্রকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ ভোক্তাদের।

এদিকে, গত ৪মাসে সয়াবিন তেলের দাম সরকার তিন দফায় বাড়িয়েছে তেল সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায়। কিন্তু গত ২০ মার্চ রমজানকে কেন্দ্র করে সরকার এক দফায় তেলের দাম কমিয়েছিল। গত ৫মে সয়াবিন তেলের নতুন দাম প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়। গত ৬ মে শুক্রবার থেকে এ ধরনের মূল্য বাজারে কার্যকর হওয়ার কথা। বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। খোলা তেলের দাম ১৩৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করা হয়েছে।

নগরীর সর্ববৃহৎ খুচরা বাজার হচ্ছে পাহাড়তলী বাজার। গত ৬মে এ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে বেশির ভাগ দোকানে সয়াবিন তেল নেই। কোথাও পলি ব্যাগের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে লিটার ২০০টাকা আবার কোথাও ১৯৫ টাকা। লিটার বোতল নেই বললেই চলে। কিন্তু রবিবার ৮মে বাজার শূণ্য সয়াবিন তেল। গোপনে বিক্রয় হচ্ছে ২৫০ টাকায়। যা নিয়ে যাচ্ছে বিত্তশালী আর পারমানেন্ট কাস্টমার।

অভিযোগ উঠেছে, আর্ন্তজাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও অপরিশোধিত পাম তেলের মূল্যে উর্দ্ধমুখী প্রবণতা বিচেনায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্য সমন্বয়ের একটি তালিকা পাওয়া গেছে গোপন সূত্রে। এই তালিকা অনুযায়ী দেখা গেছে, এক লিটার পরিশোধিত খোলা সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০টাকা। আর বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের দাম ১৯৮টাকা। তবে ৫লিটার সয়াবিনের বোতলজাত দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮৫ টাকা। আবার পরিশোধিত পাম সুপার অয়েলের খোলা লিটার প্রতি বাজার মূল্য ১৭২ টাকা। এমন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে গত ৫মে।

আরও পড়ুন