বাংলাধারা ডেস্ক »
শীতের আমেজে দিনাজপুরে পঠাপুলি তৈরী’র ধুম পড়েছে।সর্বত্রই চলছে,নতুন ধানের পিঠাপুলির উৎসব।। বারো মাসে তেরো পার্বণ বাঙালির মানসপটে জায়গা করে নিয়েছে। একেক পার্বণকে ঘিরে যেমন নানান আয়োজন করা হয়, তেমনি বাঙালির ঘরে ঘরে এ শীতের কুয়াশা ভেজা সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা আর পুলির আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যগতভাবেই। শীতের এই পিঠে উৎসবকে ঘিরে শহরের চিত্রটাও হাড় কাঁপানো শীতে জমে উঠেছে রাস্তার পাশে পিঠা বেচাকেনার দোকানগুলো।জেলার বিভিন্ন স্থানে ও রাস্তার ধারে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসছে বিক্রেতারা। অনেকে আবার পেশা পরিবর্তন করে পিঠা বিক্রির দোকান নিয়ে বসছেন। বেচাকেনাও বেশ ভালোই হচ্ছে।
এই শীতে ঘন কুয়াশার মাঝে সৌখিন ও স্বল্প আয়ের মানুষ চুলার আশপাশে ঘিরে বসে মনের আনন্দে আগুন পোহানোর পাশাপাশি পিঠার স্বাদও গ্রহণ করছেন। চলতি পথে থেমে কেউ বা আড্ডায় বসেই সকাল-সন্ধ্যার গরম গরম ভাঁপা পিঠা কিংবা চিতই পিঠা দিয়ে নাস্তটা সেরে নিচ্ছেন। পৌষের তীব্র শীতে জেলার বিভিন্ন ফুটপাথ, অলিগলিতে জমে উঠেছে ভাপা-চিতাই পিঠা বিক্রি। শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যার পর পরেই ভাঁপা পিঠা বিক্রির দোকানগুলোতে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সরজমিন দেখা যায়,দিনাজপুর শহরের মালদহপট্রি,গণেশতলা,মডার্ণ মোড়,জেলরোড,হাসপাতাল মোড়,ষষ্টিতলা,চাউলিয়াপট্রি মোড়,বালুয়াডাঙ্গা মোড়.পুলহাট মোড়সহ বিভিন্ন রাস্তা ও অলি-গলিতে,ফুটপাতে ও প্রতিটি মোড়ে ভাঁপা ও চিতই পিঠার পিঠার দোকান বসেছে। শীতের তীব্রতা যতই বাড়ছে, ততোই এসব দোকানের বিক্রিও বেড়ে চলছে। বিশেষ করে সকাল আর সন্ধ্যার পরেই জমে উঠে পিঠা বিক্রি। বেশিরভাগ দোকানেই পিঠা বিক্রি করছেন নিম্নবিত্ত পরিবারের পুরুষরা। অবসর সময় বাড়তি আয়ের জন্য পিঠা বানানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।

নতুন চালের গুঁড়ো ও নতুন খেজুরের গুড় দিয়ে যত্নসহকারে ভাঁপা পিঠা তৈরি করা হয়। পিঠাকে আরও সুস্বাদু করার জন্য নারকেল ও গুড় ব্যবহার করা হয়। ভাঁপা পিঠা ছাড়াও ক্রেতাদের জন্য চিতই পিঠা তৈরি করা হয়। প্রিতিটি পিঠা ৫ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতদিন ১০ থেকে ২০ কেজি পরিমাণ চালের পিঠা বিক্রি হয়। শীতের ভাঁপা ও চিতাই পিঠার সঙ্গে বাড়তি হিসেবে মরিচ, সরিষা ও ধনেপাতার ভর্তা ফ্রি দেয়া হয়। আবার কেউ কেউ কর্মস্থল শেষ করে ফিরতি পথে পরিবারের সদস্যদের জন্যও পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে,ভাঁপা পিঠা, তেলের পিঠা,নুন (নুনিয়া) পিঠা, পাটি সাপটা, চিতই,পানি পিঠাসহ নানান বাহারী পিঠা উল্লেখযোগ্য।
নাগরিক ব্যস্ততা আর যান্ত্রিক সভ্যতার কারণে এখন আর যেমন বারো মাসে তেরো পার্বণ হয় না, তেমনি ইচ্ছে থাকলেও এখন আর মানুষ ঘরে বানানো পিঠা খেতে পারছে না অনেকেই। আর শহরবাসীর এই শীতকালীন রসনা বিলাসে তাই রাস্তার মোড়ে মোড়ে জমে ওঠে বাহারি পিঠার পসরা। দোকানীরা পিঠা তৈরি করে স্বাদ মিটায় শহরের মানুষের।তেমনি ধানের জেলা দিনাজপুরের অলিতে গলিতে, মোড়ে মোড়ে জমে উঠেছে এসব শীতের পিঠার দোকান। অফিসগামী কিংবা বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে তাই অনেককেই দেখা যায় পিঠা খেতে। আর শহরবাসীর রসনার তৃপ্তি মেটাতে গিয়ে এক শ্রেণির মানুষের উপার্জন হচ্ছে এখান থেকেই।যা তাদের জীবনযাপনে সাহায্য করে। শুধু যে কর্মজীবী মানুষরাই এই পিঠা খেয়ে থাকেন, তা কিন্তু নয়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তার ধারের পিঠার দোকানের উপর নিভর্রশীল হয়ে উঠছে । তাইতো গাড়ি থামিয়ে রাস্তা থেকে ভাপা কিংবা চিতই পিঠা কিনতেও দেখা যায় অনেককে।
দিনাজপুর শহরের মালদহপট্রি সাধনার মোড় সংলগ্ন পিঠার দোকানে আসা পিঠা ক্রেতা মজিবর রহমান জানালেন,তার স্ত্রী শারমিন বাজারের পিঠা খেতে ভালোবাসেন। তাই তিনি ভাপা পিঠা প্রায়ই কেনেন। তাছাড়া বাড়িতে এখন পিঠা তৈরি করা সম্ভব হয় না। পথের ধারের পিঠাই ভরসা।
১৮ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করেন বাস ষ্ট্যান্ড এলাকার মজিবর রহমান। তিনি জানান, নারিকেল কুরি ও খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভাপা পিঠা। দামও বেশ হাতের নাগালেই। ভাপা পিঠা ৫ টাকা করে বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন ২ শতাধিক পিঠা বিক্রি হয় তাঁর। দিনে তিনি লাভ প্রায় ৩’শত টাকা। শীত মৌসুমে অনেক গরিব-অসহায় মানুষ মৌসুমী পিঠা বিক্রি করে আয় রোজগারের পথ খুঁজে পেয়েছেন।
সূত্র: বিএনএ
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













