জালালউদ্দিন সাগর »
করোনা মহামারির অন্ধকার এই সময়ে সবাই যখন ভীতস্থ, উদ্বিগ্ন আর আতংকিত, নিজের জান বাঁচাতে সবাই যখন নিজগৃহে কোয়ারাইন্টাইনে ঠিক তখন নগরীর প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে করোনামুক্ত রাখতে গলি থেকে গলি চষে বেড়িয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
করোনা আতঙ্কে মানুষ যখন ঘরবন্দি তখন আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ বাহিনী। জীবন বাঁচাতে অসহায় মানুষের দরজায় পৌঁছে দিয়েছে ওষুধ এবং খাবার। করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা হোম কোয়ারান্টাইনে ছিলেন সাহস যোগাতে তাদের বাসায় পাঠিয়েছেন ফল ও ফুল।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, কখনও কখনও পালানো রোগীকে ধরে আনা, করোনা আক্রান্তের বাসা, ভবন ও এলাকা লকডাউন করা, ত্রাণসামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া, গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়াসহ নানা কাজে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।
করোনা রোগীদের জন্য প্লাজমা ব্যাংক, পথে-ঘাটে জীবানুনাশক ওষুধ ছিটানো, মুমূর্ষু রোগীর শ্বাস নিতে যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য বেশ কয়েকটি আসোলেশন সেন্টারে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে মানবিকতার অন্য এক উচ্চতায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে নিয়ে গেছেন যিনি তার নাম মাহাবুবর রহমান।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সিএমপির ছয় হাজার দুইশ জন সদস্য নিয়ে একের পর এক ব্যতিক্রমি নজির গড়ে তুলে শুরু থেকেই লড়াই করছেন তিনি। মানবতার উদাহরণ সৃষ্টি করে তারা সেবা দিয়ে চলেছেন মানুষকে। এ কাজ করতে গিয়ে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও এতটুকু পিছিয়ে আসেননি সিএমপি।
গত ১২ এপ্রিল প্রথম করোনাতে আক্রান্ত হন সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের এক কনেস্টেবল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৯ জুন করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হন সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান। এ যেন বেঁচে থাকার আর বাঁচিয়ে রাখার অন্য এক গল্প, অন্য এক উপাখ্যান। যে গল্পের মূল চরিত্র চরিত্রায়ন করছেন জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানার চর পাকেরদহ গ্রামের মৃত মো. মোজাম্মেল হক আর মমতাজ বেগম’র সন্তান মাহাবুবর রহমান রিপন।
২০১৮ সালের ২৭ মে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেন ব্যতিক্রমি এই পুলিশ কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমান। সবার মধ্যে থেকেও নিজের ভাবনাকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে অভ্যস্ত তিনি। ব্যতিক্রমি কিছু করার নেশা তাঁর পিছু ছাড়েনি কখনো। হোক ব্যক্তি জীবনে কিংবা পেশাগত জীবনে।
১৯৮৪ সালে জামালপুরের মাদারগঞ্জ সরকারি হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে থেকে ১৯৮৬ সালে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি সম্পন্ন করেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের পিতা তিনি। বড় ছেলে মাহিয়ান ইশরাকের জন্ম ২৮ মার্চ ১৯৯৯। বড় মেয়ে সুমাইয়া মেহজাবিন’র জন্ম ২৯ অক্টোবর, ২০০৫সালে। মেজো ছেলে মো. মাহাথির ইশরাকের জন্ম ১২ অক্টোবর, ২০০৯ সালে।
এক সময় কবিতা লিখতেন মাহাবুবর রহমান। সম্পাদনা করেছেন ‘কলি’ নামের একটি সাহিত্য ম্যাগাজিনও। নিজের সবটুকু সৃজনশীলতা, প্রজ্ঞা-মেধা দিয়ে নিরন্তর কাজ করছেন পুলিশের এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছেন ২০১৮ সালের ২৭ মে। এর আগে ছিলেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।
বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৫তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার মাহাবুবর রহমান চাকরিতে যোগদান করেন ১৫ নভেম্বর ১৯৯৫ সালে। এরপর বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে এ.এস.পি (সদর)নরসিংদী ৩০ জুন ১৯৯৭ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮। এ.এস.পি (সদর সার্কেল) কিশোরগঞ্জ ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ থেকে ৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯। এ.এস.পি (বাজিতপুর সার্কেল) কিশোরগঞ্জ ৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯ থেকে ১০ জানুয়ারি ২০০২। এ.এস.পি (সদর সার্কেল) নেত্রকোনা ১৯ জানুয়ারি ২০০২ থেকে ৭ জুন ২০০৩। সহকারী কমিশনার, কেএমপি, খুলনা, ১৫ জুন ২০০৩ থেকে ১০ আগস্ট ২০০৩। সহ-অধিনায়ক, এপিবিএন, খুলনা ১০ আগস্ট ২০০৩। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার র্যাব ২০০৩ থেকে ৩০ জুলাই ২০০৪। পুলিশ সুপার (চলতি দায়িত্ব)এপিবিএন,মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি-২০০৪। পুলিশ সুপার হাইওয়ে পূর্ব,কুমিল্লা ১৪ অক্টোবর ২০০৬ থেকে ২৪ নভেম্বর ২০০৬। পুলিশ সুপার, এপিবিএন, বগুড়া ৪ ডিসেম্বর ২০০৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭।
উপ-পুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও বিভাগ) ডিএমপি, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ থেকে ২৫ মার্চ ২০০৯। পুলিশ সুপার,বরিশাল ২৩ মার্চ ২০০৯ থেকে ৭ মার্চ ২০১০। উপ পুলিশ কমিশনার (ডিবি-উত্তর)ডিএমপি ১৭ মার্চ ২০১০ থেকে ১০ নভেম্বর ২০১২। পুলিশ সুপার,কুমিল্লা, ১২ নভেম্বর ২০১২ থেকে ২৯ এপ্রিল ২০১৩। অতিরিক্ত ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ২ মে ২০১৩ থেকে ২ এপ্রিল ২০১৬। অতিরিক্ত ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ ৩ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ১২ আগস্ট ২০১৭। পুলিশ কমিশনার,রাজশাহী ১৩ আগস্ট ২০১৭ থেকে ৬ জুন ২০১৮। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেন গত ২৭ মে ২০১৮সালে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













