মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জংশন এলাকাগুলোতে আরসিসি ঢালাইয়ে ফাঁটল সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কুমিরা থেকে বারৈয়ারহাট পর্যন্ত জংশন এলাকাগুলোতে দুই বা ততোধিক স্থানে ফাঁটলের সৃষ্টি হয়েছে। সক্ষমতার অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও নির্মাণ শৈলী নিয়ে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, সিটি গেট থেকে ফেনী পর্যন্ত ৯৩ কিলোমিটার চারলেন সড়কের নব নির্মিত অংশটুকু দেবে গেছে হেভিওয়েট ও ওভারলোড গাড়ি চলাচলের কারণে। বড় দারোগার হাট এলাকায় স্থাপিত হেভিওয়েট গাড়ি পরিমাপের স্কেল থাকলেও দফতরে কর্মরতরা পকেট পুরাচ্ছে অবৈধভাবে গাড়ী চরতে দিয়ে। কদাচিৎ কয়েকটি গাড়ি সারাদিনে স্কেলের আওতায় নেয়া হয়। বাকিগুলো থেকে হাত বাড়িয়ে চলে টাকা আদায়।
বিশেষ করে গত পনের দিনে সড়কে এ ধরনের সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। ভারী যানবাহন তথা ট্রাক ও লরির চাকার মাপে দেবে যাওয়ার ঘটনায় পরিবহণ পরিচালনা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ওভার টেকিংয়ের সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। তবে এক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচেছ সড়ক ও জনপথ বিভাগ(সওজ)।

উল্লেখ্য, সীতাকুন্ড, কুমিারা, ভাটিয়ারী ,ধুমঘাট, মুহুরীগঞ্জ ও লেমুয়া ব্রিজ এলাকার তিনটি অংশে দেবে যাওয়া সড়কের অনেকাংশই ইতোমধ্যেই মেরামত করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রশ্ন্ উঠেছে, সওজ’র উর্ধতন কর্মকর্তারা এ সড়কের তত্বাবধানে থাকা প্রকৌশলী ও পরিদর্শকদের তদারকি করছে না। ফলে বিভিন্ন স্থানে যেমন আরসিসি ঢালাই ফেটে যাচ্ছে, তেমনি সড়কও দেবে যাচ্ছে এই সড়ক অল্প কিছুদিনের মধ্যে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। দীর্ঘমেয়াদী এই পরিকল্পনায় দফায় দফায় বাজেট বাড়ানো হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে। এছাড়াও সড়ক নিয়ে প্রশ্ন তুলছে দেশের বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ রয়েছে, সওজের প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করে বৃহদায়তন ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো নিজেদের সুবিধা মত স্থানে সরকারি অর্থে সড়কে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ করে নিয়েছে। শিল্প কারখানা এলাকায় বিশেষ করে সিটি গেট থেকে বাড়বকুন্ড পর্যন্ত বেশিরভাগ শিল্প মালিকরা এ ধরনের সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শুধু মূল সড়কের ডিভাইডারে ট্রাক ও লরি পাসিং আউট করার জায়গা করে নিয়েছে। ফলে দূর পাল্লার যানবাহনগুলো এসব স্থানে এনে ট্রেইলর ও কাভার্ড ভ্যানের ব্রেক ডাউনে পড়তে হয়। ফলে দীর্ঘ সময় এসব এলাকায় সার্বক্ষণিক যানবাহন জট লেগেই থাকে। গত বৃহস্পতিবার রাতেও দীর্ঘ প্রায় দুঘন্টারও বেশি সময় যানজট লেগেছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের সিটি গেটের পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের সুবিধা ভোগ করছে পরিবহণ সেক্টরে থাকা চালক ও মালিকরা। কালুশাহ মাজার এলাকায় তৈরি হচ্ছে আরেকটি নতুন ওভার ব্রিজ। এ ওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফৌজদারহাট ও ভাটিয়ারি পর্যন্ত রেল লাইন দিয়ে ঢাকা অভিমুখে পণ্যবাহী ওয়াগন ও কন্টেনার কেরিয়ার চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। কালুশাহ মাজার এলাকার পুরাতন ওভার ব্রিজ থেকে নামলেই পোর্ট এক্সেস রোড ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগস্থল প্রতীয়মান হবে। সেখানেই রয়েছে সুদীর্ঘ প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক দেবে যাওয়ার নমূনা চিহ্ন।

ফৌজদারহাট থেকে শুরু করে কুমিরা কানেটিং রোড পর্যন্ত সড়ক দেবে গেছে। কিন্তু সংস্কারে কোন পদক্ষেপ নেই। ইতোমধ্যে কুমিরা এলাকায় ডিভাইডার দেয়া শুধুমাত্র প্রায় এককিলোমিটার টানা সড়ক মেরামত হয়েছে। এরপর থেকে বাড়বকুন্ড এমনকি দারোগারহাট স্কেল এলাকা পর্যন্ত গত পনের দিনে সড়ক দেবে যাওয়ার ঘটনা নতুন সমস্যায় পরিণত হয়েছে। মীরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজ এলাকায় জংশন সড়কের আরসিসি ঢালাইয়ে বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও মীরসরাই থেকে ফেনী পর্যন্ত পুরো সড়কের তথা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী উর্ধগামী সড়কটির নব নির্মিত অংশ দেবে গেছে। অথচ, নিম্নগামী পুরাতন সড়কটি এখনও ঠিক রয়েছে।

প্রশ্ন্ উঠেছে, চারলেন সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করেছে তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধনের আগেই দেবে যাওয়ার ঘটনা ও আরসিসি ঢালাই ফাটলের ঘটনায় বার বার মেরামত করা হয়েছে চারলেনের এ সড়কটি। অনেকটা জুবুথুবু অবস্থা সড়কের। চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত ৯৩ কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগ স্থানেই মেরামত করা হয়েছে। কারণ এসব এলাকায় ২০১৪ সালেই মূল সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল। তবে ডিভাইডারসহ আনুষাঙ্গিক কিছু কর্মকা-ের কারণে পরিসমাপ্তি ঘটেছে ২০১৬ সালে। উল্লেখ্য, তিন বিদেশী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তথা সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড, গ্যানন ডানকার্লি এন্ড কোম্পানি লিমিটেড ও শিখো পিবিএল জেভি লিমিটেড ফোন লেন সড়কের নির্মাণ কাজ করছে। ১৩ ধাপে তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ সড়কের নির্মাণ চুক্তি শেষ অনুযায়ী কাজ শেস করেছে। ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি একনেকে সভায় ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন প্রকল্পের জন্য ৬২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ব্যয়সহ এ সড়কের নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের ১৩টি প্যাকেজের মধ্যে সবকটি প্যাকেজেই কোন না কোন কারণে সমাপ্ত হতে দেরী হয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













