দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায় নির্মিত হচ্ছে আরও ছয়টি জেটি। এর মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর জেটির নির্মাণকাজ ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলছে। দুটি জেটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৮০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ১ ও ২ নম্বর জেটি নির্মাণের প্রস্তাবনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এর মধ্য দিয়ে আরও বড় হচ্ছে মোংলা বন্দর।
এ ছাড়া ১১ ও ১২ নম্বর জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে এসব জেটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে বন্দরটি দেশের বড় অর্থনৈতিক হাব হবে বলে জানিয়েছেন বন্দরের জেটি নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর শফিকুল ইসলাম সরকার।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। বন্দর চ্যানেলে বিদেশি জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্য ৬৯টি নেভিগেশন বয়া স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বন্দরের জেটি, মুরিং বয়া ও অ্যাংকোরেজে একই সঙ্গে ৪৭টি জাহাজ নোঙরের সুবিধা রয়েছে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সুবিধার্থে বন্দর ঘিরে এখন ট্রানজিট শেড, ওয়্যারহাউস, কনটেইনার ইয়ার্ড, হিমায়িত খাদ্য সংরক্ষণের ১৬১টি রিফার প্লাগপয়েন্ট, কার পার্কিং ইয়ার্ড, ১৩৬টি আধুনিক হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি, টাগবোটসহ ৩২টি সহায়ক জলযান রয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে সংযোজন হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। দেশের সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, নেপাল, ভুটান ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর পণ্য বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। এতে জাহাজ চলাচল বেড়ে যাওয়ায় বন্দরের সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সক্ষমতা বাড়াতে নতুন ছয়টি জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৮০০ কোটি টাকায় নির্মাণাধীন ৩ ও ৪ নম্বর জেটির কাজ শেষ হয়েছে ৬২ শতাংশ। ১ ও ২ নম্বর জেটি নির্মাণের প্রস্তাব একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ১১ ও ১২ নম্বর জেটি নির্মাণের পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেটিগুলো পুরোপুরি নির্মাণ হলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আসবে।
মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী শেখ ফরিদুল ইসলাম ও মশিউর রহমান বলেন, বন্দরটি ইতিমধ্যে গতিশীল হয়েছে। যদি জেটি বাড়ানো হয়, তাহলে জাহাজ চলাচল এবং পণ্য হ্যান্ডলিং আরও বাড়বে। এতে একদিকে যেমন বন্দর অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে, ব্যবসায়ীরাও সহজে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবেন।
তারা আরও বলেন, জেটি তৈরির ফলে বন্দরে পণ্য ওঠানামার ক্ষেত্রে যে জটিলতা দেখা দেয়, সেটি কমে আসবে। বন্দরের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর যদি চাপ কমাতে হয় তাহলে মোংলা বন্দরকে আরও আধুনিকায়ন করাসহ বন্দরের জনবলও বাড়াতে হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয়টি জেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া পণ্যের চাপ সামলানোর পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক গতি আসবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও জেটি নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, ৩ ও ৪ নম্বর জেটির কাজ আগামী দেড় বছরের মধ্যে শেষ হবে। ইতিমধ্যে ৬২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১ ও ২ নম্বর জেটি নির্মাণের প্রস্তাব একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। একই সঙ্গে ১১ ও ১২ নম্বর জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা করছি আমরা। ছয়টি জেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে কার্যক্রম গতিশীল হবে। জাহাজ ও পণ্যজট থাকবে না। কনটেইনার এবং কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের কাজেও দারুণ গতি আসবে।
তিনি আরও বলেন, বন্দরের যাত্রা শুরুর পর থেকে পাঁচটি জেটি তৈরি করা হয়, যা বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। নতুন ছয়টি জেটি যুক্ত হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে খরচ কমে আসবে। সেই সঙ্গে বন্দরটি আন্তর্জাতিকভাবে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানিয়েছেন, বর্তমানে বন্দরের চারটি প্রকল্প চলমান। এর মধ্যে পশুর চ্যানেলের ইনার বারে (জেটি-সংলগ্ন) ড্রেজিং শেষ হলে বন্দরের জেটিতে ১০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ হ্যান্ডলিং সুবিধা তৈরি হবে। এ ছাড়া ‘আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্প’-এর মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এই প্রকল্প শেষ হলে বছরে এক কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো, চার লাখ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা তৈরি হবে। এ ছাড়া বন্দরে চলমান দুটি জেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে বছরে আরও দুই লাখ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও জানান, বন্দর এখন আগের চেয়ে আরও গতিশীল হয়েছে। কনটেইনারবাহী জাহাজের আগমন বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো পরিবহনে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, কনটেইনার পরিবহনে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ ছাড়া এই বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ।