২৪ অক্টোবর ২০২৫

দোকান চালিয়ে স্বপ্ন গড়ছে চবির শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনটি শুধু ট্রেন আসা-যাওয়ার কেন্দ্র নয়, বরং এখানেই জমে উঠেছে তরুণ স্বপ্নবাজদের এক অভিনব উদ্যোগের জগৎ। স্টেশন চত্বরে পা রাখলেই চোখে পড়ে ছোট ছোট কিছু দোকান। কেউ বিক্রি করছে চা-বিস্কুট, কেউ গয়নাগাটি, কেউ বা ফটোকপি কিংবা বইয়ের ব্যবসায় যুক্ত। অবাক করার মতো হলেও সত্যি, এসব দোকানের পেছনে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী।

কেউ অর্থনীতি বিভাগের, কেউ নাট্যকলা কিংবা সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী। ক্লাসের ফাঁকে, পরীক্ষার চাপে বা অবসর সময়ে তাঁরা দোকানের টিনের চালার নিচে গড়ে তুলছেন স্বপ্নের ভিত।

স্টেশনের একদম শুরুতেই চোখে পড়ে একটি বইয়ের দোকান। এটি চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২-২৩ সেশনের এক শিক্ষার্থী। শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ক্যাম্পাসে বইয়ের সহজলভ্যতা না থাকায়, তিনি লাইব্রেরির চেয়ে কম দামে বই সরবরাহের মাধ্যমে অন্য শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন—নিজেও লাভবান হচ্ছেন।

পাশেই দেখা মেলে এক কাঁচা আমের শরবতের স্টলের। এটি চালাচ্ছেন সমাজবিজ্ঞান ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দুই শিক্ষার্থী। মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি ও ধার নেয়া একটি ব্লেন্ডার দিয়েই শুরু করেছিলেন তাঁরা। পরে আরও কিছু ফান্ড জোগাড় করে শরবতের রেসিপি আরও উন্নত করেন। গরমের দিনে এই শরবত হয়ে উঠেছে সবার প্রিয় পানীয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী চাকরি ছেড়ে শুরু করেছেন বাঁধাকপির পাকোড়া বিক্রি। শহরে যাতায়াতের ঝামেলা তাঁকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করলেও বসে না থেকে নতুন কিছু করার তাগিদ থেকেই গত দুই মাসে এই উদ্যোগ। এখন ডিমরোল ও পুডিংও যুক্ত করেছেন মেন্যুতে—ভবিষ্যতে আরও ২-৩টি আইটেম বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

আরেকটু সামনে গেলে চোখে পড়ে খুলনার ঐতিহ্যবাহী পাপড়ের দোকান। এটি চালাচ্ছেন ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। আগে অনলাইনে মধু বিক্রি করলেও এবার অফলাইনে নিজ এলাকার ঐতিহ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। প্রথম দিনেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়ে এখন দ্বিতীয় দোকান খোলার কথা ভাবছেন।

প্ল্যাটফর্মের একটু ওপরে, লতাপাতা আর হারিকেন দিয়ে সাজানো এক নান্দনিক চায়ের দোকান—‘Timepass’। এর উদ্যোক্তা নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান আদিব। বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি এখানে চলে বন্ধু-জুনিয়রদের আড্ডা। ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গা ঘুরে এবং ইউটিউব দেখে শিখেছেন বাহারি রকমের চা বানানো—দুধ চা, মাল্টা চা, পুদিনা চা, এমনকি চকলেট চাও। আগে বাসা থেকে খরচ নিতে হলেও এখন নিজের দোকানের আয়েই নিজের খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এমন আরও বহু দোকান ছড়িয়ে আছে এই স্টেশন চত্বরে। এগুলো শুধু ব্যবসা নয়, বরং তরুণদের স্বপ্নচর্চার বাস্তব মঞ্চ। ক্লাসের ফাঁকে দোকান চালানো, পড়াশোনার সঙ্গে সময় সামঞ্জস্য, লোকসান মেনে নেওয়ার মতো কঠিন বাস্তবতা—সবই শেখাচ্ছে জীবনের প্রয়োজনীয় পাঠ।

তবে সবকিছুই সহজ নয়। জায়গার সংকট, প্রশাসনিক বিধিনিষেধ, কখনো বা ক্রেতার অভাব—এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই তাঁরা এগিয়ে চলেছেন একান্ত চেষ্টা আর বিশ্বাস নিয়ে। এই দোকানগুলো হয়ে উঠেছে শুধু জীবিকার উৎস নয়, বরং একটি শক্ত ভিত্তি—যেখানে গড়ে উঠছে আগামী দিনের স্বপ্ন।

এআরই/বাংলাধারা

আরও পড়ুন