কক্সবাজার প্রতিনিধি »
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্লাস্টের নারীকর্মীকে ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগের বিরুদ্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র করা ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলায় অবশেষে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এনজিও কর্মী সেই তরুণীকে অভিযুক্ত হিসেবে গণ্য করে দন্ডবিধির ৫০০ ও ৫০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করেছেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত। চার্জ গঠনের জন্য পূর্বের ধার্য্য তারিখ সোমবার (১৫ মার্চ) আসামী পক্ষের মামলা হতে অব্যহতির আবেদন নাকচ করা হয়। এরপর চার্জ গঠন করে আগামী ১৮ এপ্রিল স্বাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য করেছেন বিচারক। তবে, সেই পর্যন্ত অভিযুক্ত এনজিও কর্মীর জামিন বহাল রাখা হয়েছে। বিজ্ঞ বিচারকের সিদ্ধান্তের পর বাদি ও আসামী পক্ষের আইজীবিরা আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিজিবির প্রধান কৌশলী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদুল করিম জানিয়েছেন, গত ১১ মার্চ এ মামলার চার্জ গঠনের দিন ধার্য্য ছিলো। সেদিন চার্জ গঠনের তারিখ পিছিয়ে ১৫ মার্চ দিন ধার্য্য করা হয়েছিল। সেই মতে আজ (১৫ মার্চ) ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ করা তরুণীকে অভিযুক্ত করে দন্ডবিধির ৫০০ ও ৫০১ ধারায় চার্জ গঠন করে আগামী ১৮ এপ্রিল স্বাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য করেছেন। স্বাক্ষ্য প্রমাণে তরুণীর অভিযোগ প্রমাণ হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিবেন বিজ্ঞ আদালত। এর আগে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারির পর ১০ মার্চ শুনানীর দিন ধার্য্য করাছিল। সেই শুনানী শেষে ১১ মার্চ চার্জ গঠনের দিন ছিল। কিন্তু তা পিছিয়ে ১৫ মার্চ রাখা হয়েছিল। গত ১০ নভেম্বর কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টেকনাফ বিজিবির দমদমিয়া তল্লাশি ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত জেসিও নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ আলী মোল্লা বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন।
অপরদিকে, আসামী পক্ষের আইনজীবি আবদু শুক্কুর জানান, মামলা থেকে আসামী তরুণীকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত তা নাকচ করে চার্জ গঠন করেছেন। তবে, আসামীর জামিন বহাল রেখেছে আদালত।

তথ্য মতে, গত ৮ অক্টোবর টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের দমদমিয়া চেকপোস্টে নিয়মমতো অন্যদের সাথে ব্লাস্টের এক নারী কর্মীকেও তল্লাশি করা হয়। অটোরিকশার যাত্রী ওই নারী পরে বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ করেন। তার বক্তব্য দিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় অনেক গণমাধ্যম তাদের অনলাইন ভার্সনে প্রতিবেদনও প্রচার করে। এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। ঘটনার সত্যতা জানতে দ্রুত ততপর হয়ে উঠে গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমও। ওই নারী কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হন। কিন্তু কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে সেই নারী এনজিওকর্মীকে ধর্ষণের আলামত পাননি বলে রিপোর্ট দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১০ নভেম্বর কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ’র আদালতে ওই নারীর বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার মানহানির মামলা করে বিজিবি।

টেকনাফ বিজিবির দমদমিয়া তল্লাশি ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত জেসিও নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ আলী মোল্লা বাদী হয়ে মামলাটি করার পর আদালত সাত কার্যদিবসের মধ্যে আর্জিতে উল্লিখিত সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনার আলোকে ২২ নভেম্বর (রোববার) পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি হাফিজুর রহমান। গত ১১ নভেম্বর আদালতের নির্দেশে ২২ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমার পর সেইদিন প্রতিবেদন গ্রহন করে আসামিকে সমন দেয় আদালত। সেই সমনে ১৪ জানুয়ারি আসামীকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়। নির্ধারিত দিনে আসামী হাজির হওয়ায় জামিন দেয় আদালত। পরবতী শুনানীর জন্য ১০ মার্চ দিনধার্য্য করা হয়েছি। সেই মতে শুনানী শেষে ১১ মার্চ চার্জ গঠনের জন্য দিনধার্য্য ছিল। কিন্তু আদালত ১১ মার্চের পরিবর্তে চার্জ গঠণের জন্য ১৫ মার্চ দিন ধার্য্য করে। সেই মতেই ১৫ মার্চ অভিযোগ গঠন করে ১৮ এপ্রিল স্বাক্ষীর জন্য সময় রেখেছে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













