৪ নভেম্বর ২০২৫

নওফেলের কয়েদিপ্রীতি, মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ১৪ কয়েদিকে মুক্ত করে মানবিকতার দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

রোববার (১০ মে) করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কারাগারে চাপ কমাতে বন্দীদের মুক্তি দেয়া কার্যক্রমে তৃতীয় দফায় জরিমানা আদায় করা ২২ কয়েদিকে মুক্তি দিয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তি দেয়া ২২ জনের মধ্যে ১৪ জন আসামির ৬৫ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেয়া ফান্ড থেকে। বাকি ৮জন আসামি তারা নিজেরাই জরিমানা আদায় করে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দীর চাপ কমাতে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া শুরু করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে কারাদণ্ড এক বছরের বেশি নয় এমন আসামিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরুর তৃতীয় ধাপে জরিমানা পরিশোধ করায় ১০ মে ২২ জনকে মুক্তি দেয়া হয়।

মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা হলো- ১. রাউজান উপজেলার পশ্চিম দারিয়া গ্রামের তিলক বড়ুয়া। যৌতুকের মামলায় তার এক বছর কারাদণ্ডসহ ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের সাজার আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে। ২. রাউজানের পাহাড়তলী খান পাড়া গ্রামের মো. মুন্না। মাদক আইনের ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের। ৩. রাউজানের গুচ্ছ গ্রামের মো. ফারুক। তার বিরুদ্ধে যৌতুক আইনের একটি মামলা এক বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের।

৪. ভুজপুর থানার পশ্চিম ভুজপুর গ্রামের মো. জাবের। যৌতুক মামলায় তার ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২০ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল। ৫. ভুজপুর থানার পূর্ব ফটিকছড়ি গ্রামের আলতাফ হোসেন। যৌতুক আইনে এক বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাস কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের। ৬. ভুজপুরের হোসনাবাদ গ্রামের মীর আহাম্মদ ওরফে মিয়া। বন আইনের একটি মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে। ৭. ভুজপুরের পশ্চিম সিকদারবিল এলাকার বাদশা আলম ওরফে শাহ আলম বন আইনের একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল।

৮. রাঙ্গুনিয়ার খিলমোঘল হোসনেবাদ গ্রামের মো. সেকান্দর। তার বিরুদ্ধে যৌতুক আইনের একটি মামলায় এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের। ৯. রাঙ্গুনিয়ার শিলক গ্রামের মো. নিয়ামত উল্লাহ। যৌতুক আইনের একটি মামলায় তার এক বছর কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাস কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের।

১০. সীতাকুণ্ডের উত্তর মাহমুদাবাদ গ্রামের মো. ইমরান হোসেন। নারী ও শিশু নির্যাতন নিরোধ আইনে তিনি এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। ওই মামলায় তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল। ১১. সীতাকুণ্ডের মধ্যম সোনাইছড়ির মো. রুবেল। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের।

১২. নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গার মো. আবদুর নুর ওরফে সাগর। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল। ১৩. নগরীর ডবলমুরিং থানার হাজীপাড়ার মো. নজরুল ইসলাম শিমুল। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলায় তার ১ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল। ১৪. চান্দগাঁওয়ের উত্তর মোহরার মো. নুর গণি। তার বিরুদ্ধে যৌতুক আইনের একটি মামলায় ১ বছর ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের।

১৫. পটিয়ার কেলিশহর গ্রামের মো. ইমরান ওরফে এনাম। মাদক মামলায় তার ৩ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড ছিল। ১৬. পটিয়ার কুমারপাড়া গ্রামের খালেদা বেগম। মাদক আইনের একটি মামলায় এক বছরের কারাদণ্ড, একইসাথে তিন হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে। ১৭. পটিয়া থানার কেলিশহর গ্রামের জনি ধর। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনের একটি মামলা এক বছরের ও ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল।

১৮. সাতকানিয়ার পুরানঘরের রাশেদুল ইসলাম। বন আইনের একটি মামলায় মামলায় তার ৫ হাজার টাকা জারিমানা ও অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের। ১৯. সাতকানিয়ার সাচি পাড়ার সাহাব উদ্দিন। একটি মারামারি মামলায় ৬ মাসের সাজা ও এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে।

২০. চন্দনাইশের সৈয়দাবাদ গ্রামের আবদুর রহমান। বন আইনের একটি মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল তার বিরুদ্ধে। ২১. নোয়াখালীর চরজব্বর থানার চরভাটা গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে ১ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের। ২২. চরজব্বর থানার উত্তর কাছাফিয়া গ্রামের মাসুক ওরফে মাসুদ। তার বিরুদ্ধে রেলওয়ে আইনে ১ বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল আদালতের।

শিক্ষা উপমন্ত্রীর এমন উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারা পরিদর্শক মোস্তারী মোরশেদ স্মৃতি বলেন, তিনি (শিক্ষা উপমন্ত্রী) কয়েদিদেরকে নিয়ে ভালো কিছু চিন্তা করেছেন বলেই নিজের ফান্ড থেকে জরিমানা আদায় করে এসব কয়েদিদের কারামুক্ত করেছেন। বিশেষ করে যেসব কয়েদি জরিমানা আদায় করতে পারছেন না তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। যা মানবিকতার একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। তিনি যা করছেন তা জনগণের কল্যাণে ভালো কিছু চিন্তা করেই করছেন।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে আরো জানা যায়, গত শুক্রবার ১১জন আসামীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ৩০ জন আসামীর মুক্তির আদেশ এসেছিল। তন্মধ্যে জরিমানা পরিশোধ করতে না পারায় ১৯জন আসামীকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। প্রথম দুই ধাপে ৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। অনুর্ধ্ব এক বছর সাজাপ্রাপ্তদের মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়ে দেশের কারাগারগুলোতে চাপ কমাতে বন্দীদের মুক্তি দেয়া কার্যক্রমে কয়েক দফায় ২০জন আসামিকে বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি দেয় চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন