আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান »
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বেশ কয়েক দিন ধরে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে আসছে। গুলির বিকট শব্দে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গুলির আতঙ্কে ভয়ে দিনপার করছেন কোনারপাড়ার পার্শ্ববর্তী শূন্যরেখার (নো ম্যানস ল্যান্ড) নামের আশ্রয় শিবিরে থাকা প্রায় ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাসহ ঘুমধুম ইউনিয়নের হাজারো বাংলাদেশি। তবে ওপারের গোলাগুলির ঘটনা নজরদারিতে রাখেছেন বলে জানিয়েছেন বিজিবি।
ধুমধম সীমান্তে কর্মরত ৩৪-বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হোসাইন জানান, গোলাগুলির শব্দ তারা এপার থেকেও শুনেছেন। তবে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যেরই অভ্যন্তরে হচ্ছে গোলাগুলির ঘটনা। এ ঘটনায় বাংলাদেশি সোসাইটিতে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সার্বক্ষণিক সতর্ক রয়েছে। চার পাশে টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে সীমান্তের বসবাসকারী স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ২০ দিন ধরে মিয়ানমার বর্ডারের দিকে বিকট গুলির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন তারা। এমন কী মটরসেলের আওয়াজে তারা আতঙ্কিত। সীমান্তের ৩৮ নম্বর পিলার থেকে ৪১ নম্বর পিলার পযর্ন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে প্রায় ২০ দিন ধরে ।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি জানান, গত সোমবার (২২ আগস্ট) সকাল ৭টা থেকে বিকট শব্দে মর্টারশেল ও ভারী অস্ত্রের গুলির শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় ১কিলোমিটার দূরের পাহাড়ে গিয়ে পড়ছে এক একটা শেল ও গুলি। থেমে থেমে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে গোলাগুলি। শূন্যরেখার দিকে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
এ সীমান্তের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে অবস্থিত একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুমধুম রেজু রড়ইতলী উচ্চ বিদ্যালয়। সে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪শ’র চেয়ে অধিক। গত ২ সপ্তাহ ধরে রাত-দিন গোলাগুলির বিকট শব্দ শুনতে পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। স্কুলের যেতে অনেকে পাচ্ছে। কোন সময় হঠাৎ তাদের স্কুলের পেছনে কী যেন ঘটছে— এমন ভয়ে আতঙ্কিত সবাই।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল বড়ুয়া বলেন, সীমান্তে বেশ কিছুদিন ধরে মিয়ানমারের দিকে ভারী অস্ত্রের গোলাগুলির শব্দ শুনছেন তারা। ওপারে গোলাগুলি হলেও বাংলাদেশ সীমান্তের বিজিবি নিয়মিত টহল দিতে দেখছেন তারা। এজন্যে সবার ভয় কেটে যাচ্ছে। তাদের স্কুলের শিক্ষা কাযর্ক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা-যাওয়া করছে কোন সমস্যা নেই।
সীমান্তের রেজু আমতলি বাসিন্দা গৃহিনী রোখসানা বেগম ও ম্যওয়ে মার্মা বলেন, ওপারে গুলির শব্দ শুনে অনেক সময় তারা ভয়ে কাঁপে। কিন্তু কী করব, গুলির ভয়ে তো কোথাও যেতে পারব না। তবে এই ক’দিন গুলাগুলিতে আতঙ্কে আছেন সীমান্তের বসবাসকারীরা।
ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক সোহাগ রানা জানান, কয়েক দিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি হচ্ছে। মর্টার শেলসহ গুলির শব্দ কানে বাজলেও বাস্তবে সেখানে কী হচ্ছে, বলা মুশকিল। তবে সীমান্তের বিজিবি টহল কঠোর রয়েছে।












