১১ ডিসেম্বর ২০২৫

নাতবৌয়ের সাথে যৌন উত্তেজক কথা বলে ভাইরাল গিয়াসউদ্দিন, মিরসরাই জুড়ে বিক্ষোভ

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

মোবাইল ফোনে নাতবৌয়ের সাথে যৌন উত্তেজক কথা বলে ভাইরাল হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আলহাজ্ব গিয়াসউদ্দিন। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একাধিক অডিও ক্লিপসগুলো শুনে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে উত্তর চট্টগ্রামসহ সারাদেশে।

প্রকাশের অযোগ্য কুরুচিপূর্ণ কথাসংবলিত এই অডিও ক্লিপগুলো নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন মিরসরাই এলাকার আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। শুধু তাই নয়, ওই নেতাকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মিরসরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার প্রায় এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে।

শনিবার(২৯মে) সকালে মিরসরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ২টি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সর্বস্তরের লোকজন মানববন্ধন করেন। বিকেলে আওয়ামীলীগের একটি বর্ধিত সভা হবার কথা রয়েছে।এর আগে ২৭ মে প্রতিটি ইউনিয়নে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন থেকে গিয়াসউদ্দিনকে দল থেকে বহিস্কারের দাবি জানানো হয়।

১১নং মগাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির বাংলাধারাকে জানান, গিয়াসউদ্দিনের এই ঘটনা নজিরবিহীন। আমরা চাই এই ঘটনার যথাযথ বিচার হোক।

১০নং মিঠানালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের কাছে কেউ নিরাপদ নয়। যারা ন্যায় বিচারের আশা দিয়ে ভুক্তভোগীকে ব্যবহার করে নিজের হীন স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে তারা অপরাধী। এই ধরণের অপরাধীর বিচার না হলে মানুষ নেতাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে।

১নং করেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন জানান, গিয়াসউদ্দিনের এই ঘটনায় আমাদের মাথা নিচু হয়ে গেছে। তদন্ত করে উনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

৮নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিপ্লব জানান, এই ঘটনা মিরসরাই এলাকার জন্য চরম লজ্জাজনক। দলের জন্য অবমাননাকর এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এদিকে উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের একজন সিনিয়র নেতা জানান, ”অডিও ক্লিপটি শুনেছি। গিয়াসউদ্দিনের এইসব কথায় আমার নিজেরও লজ্জা লাগছে। আমাদেরও পরিবার আছে, আত্মীয়-স্বজন আছে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইসব কথা ভাইরাল হওয়ায় পরিবারের কাছেও আমাদের জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে। একজন নেতার এই ধরনের অগ্রহণযোগ্য কাজ কোনভাবেই সমর্থন করার মত নয়। এই ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।”

এদিকে এই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ গিয়াসউদ্দিন বাংলাধারাকে জানান, যে মেয়েটি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, সে সম্পর্কে আমার নাতবউ। তার স্বামীর সাথে পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। মেয়েটি অসহায় হওয়ায় তার সংসার যাতে টিকে তা আমি চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু মেয়েটি সম্ভবত কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনটি খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে আসছে। কিন্তু কেউ সফল হয় নি। এবারো হবে না। সত্যের জয় অবশ্যই হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ মে মিরসরাই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৯০১/২০২১) করেছেন ২১ বছর বয়সী ওই তরুণী। তিনি মিরসরাইয়ের মায়ানী ইউনিয়নের মধ্যম মায়ানী এলাকার বাসিন্দা। ওই তরুণী সম্পর্কে গিয়াস উদ্দিনের নাতি-বউ বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ জানুয়ারি আনোয়ার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে ওই তরুণীর বিবাহ হয়। আনোয়ারের আগে থেকে এক স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ২১ বছরের ওই তরুণীকে বিয়ে করেন আনোয়ার। দ্বিতীয় বিয়ের সময় কথা হয়, আনোয়ার ভাড়া বাসায় তরুণীকে রাখবেন এবং প্রথম স্ত্রীর বাসায় যাবেন না। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর প্রথম স্ত্রীকে ভাড়ায় বাসায় নিয়ে আসে আনোয়ার। তখন থেকে তরুণীর ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করলে ৭ মে তিনি বাবার বাড়িতে চলে যান।

জিডিতে ওই তরুণী লিখেছেন, আমার স্বামী আনোয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের আত্মীয় হওয়ায় আমি তাকে বিষয়টি অবগত করি এবং তিনি আমাকে বিষয়টির সমাধান করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। পরবর্তীতে তিনি আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল কথাবার্তা বলে কু-প্রস্তাব দেন। আমি বিষয়টি জনসম্মুখে বলে দিবো বললে গিয়াস উদ্দিন গত ১৮ মে রাত আনুমানিক ৮টা ও ২১ মে বেলা ১২টার দিকে মায়ানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম গোলাম সরোয়ারকে আমাদের বাড়িতে পাঠান। তখন আমার সাথে গিয়াস উদ্দিন যে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন তা জনসম্মুখে প্রকাশ করলে আমাকে হত্যা ও আমার বড় ধরনের ক্ষতি করবে বলে হুমকি প্রদান করেন সরোয়ার। উপরোক্ত ঘটনা সৃষ্টিকারী কুপরামর্শদাতা আমার স্বামীর নানা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন