বৃষ্টি দাশ »
“আমরা নারী , আমরা সব পারি।” একবিংশ শতাব্দীর এই আধুনিক যুগে কি নেই, বলতে গেলে সকল উন্নয়ন মাথা ছাড়া দিয়ে ওঠেছে। আর নারীরাও ঠিক সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর কাছে সব আছে। চাকরি থেকে শুরু করে হাইকোর্ট পর্যন্ত নারীর অবতরণ। সেলাই থেকে শুরু করে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা। কি না পারে তারা। মহাকাশ গবেষণা, বিমান পরিচালনা, ডাক্তার, প্রকৌশলী, প্রভাষক, নিরাপত্তা প্রদান ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করছে।
কি ভাবছেন, নারীর গুণ গাইতে আসছি? নাকি ভাবছেন মিথ্যা প্রশংসা করছি? গুণও গাইছি না, মিথ্যা প্রশংসাও করছি না; সত্য কথাই বলছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীরা—স্বার্থপর, চরিত্রহীন, নির্লজ্জ। রাগ হচ্ছে কি আমার ওপর? এটাই সত্যি।
ঘর থেকে বাহির পর্যন্ত এই নারীকে কত কিছু সহ্য করতে হয় তা এই নারী জাতি ছাড়া আর কেউ জানে না। জন্মলগ্ন থেকে বুঝানো হয় যে মেয়েদের ঘরে থাকতে হয়, সন্তাত জন্ম দিয়ে বংশ বাড়াতে হয়, বাচ্চা সামলাতে হয়, উঁচু গলায় নারীদের কথা বলতে নেই, নারীর ওপর হতে থাকা অন্যায়ের ওপর প্রতিবাদ না করে সহ্য করে নিতে হয়, ছেলেমি পোশাক তো—নাইবা বললাম।
নারীদের বেশি রাত করে ঘরে আসা মানা কারণ সমাজ তাকে হীনচরিত্রের সনদ যে প্রদান করবে। রাস্তায় ওতো চলাফেরা করা যাবে না তাদের, কারণ নারীদের দেখলে সমাজের পুরুষদের মাথা ঠিক থাকে না। দুয়েকটা মেয়ে যখন একটু নিজের মতো বাঁচতে চাই তখন সে হয় স্বার্থপর। যখন সে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাশ্চাত্য পোশাক পরে তখন সে নির্লজ্জ, তার চরিত্র ঠিক নাই। নারীদের সব জায়গায় যাওয়া মানায় না, দুই-এক জন যারা বাইরে পা বাড়ায় তারা ধর্ষিত হয়, তাই নারী সমাজের ওপর আঙ্গুল তুলে বলা হয় “ঘরেই থাকতে হবে।”
তথা কথিত সমাজের মতে নারীর পোশাক নাকি নারীর চরিত্রকে উপস্থাপন কর! আচ্ছা—তাহলে বোরকায় আচ্ছাদিত নারী কেন নির্যাতিত? সারা বিশ্বে কত উন্নয়ন, কত বড় বড় দালান, কত গাড়ি—বাড়ি, কতই না সমৃদ্ধি। কই নারীর বেলায় তো তা হচ্ছে না, তারা ঘরে থাকলেও ধর্ষিত হচ্ছে আর বাইরে থাকলেও। নারীর উন্নয়নইবা কবে হবে। তাই বলে আমি বলছি না নারীর জন্য মোমবাতি নিয়ে উন্মুক্ত মঞ্চে বসে থাকতে হবে, শুধু নারীর প্রতি একটু সহানুভূতি দেখাতে বলছি কারণ নারীর জীবন খুবই সংগ্রামের। নারী যাদের সংস্পর্শে থাকে তারাই নারীকে শাসন করে। তবে শাসন দরকার কন্যাদের তুলনায় বালকদের বেশি পরিমাণে। আমার এই কথায় দুয়েক জন আমাকে আঙ্গুল তুলে বলবে যে নারীকে পুরুষের পাজর থেকে তৈরি করা হয়েছে তাই তারা পুরুষের নিচেই থাকবে।
কেন ভাই? তুমি যেমন মানুষ আমিও তো মানুষ। তোমার যেমন অধিকার আছে, আমারও তো তেমন অধিকার আছে। আমি নারী বলে—আমি তোমার কাছে সমান অধিকার চাইতে আসি নাই, একটু সম্মান দিলেই মানিয়ে নিব। আমি নারীর সম্মানের জন্য আজকে চিৎকার করব, কালকে চিৎকার করব, দেখবেন পরশুদিন আমার গলা বসে যাবে। আমি রাজপথে বিক্ষোভ করলে সমাজ তথা কথিত রাষ্ট্র আমাকে বলবে—চরিত্রহীন!
আমি নিজেকে প্রচারণা করতে এসেছি । যারাই নারীর অধিকার আর সম্মানের জন্য কথা বলতে আসে তারাই রাষ্ট্র বিদ্বেষী। পরিবর্তন কখনো একার দিক থেকে আসে না এইটা সত্য। আমি-আপনি হাজারো চিৎকার করলেও কিচ্ছু হবে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত নারীর আর্তনাদ সকলের মনের সংকীর্ণতাকে দূর করছে ততক্ষণ পর্যন্ত নারীর উন্নয়ন কোনো কাজে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। সবাইকে এই পশ্চাদপদ নারী সমাজের সম্মান করতে হবে, তা না হলে এই উন্নয়ন বৃথা। নারীর ক্ষমতায়নের দরকার নাই, নারীর সম্মান যাতে সবাই করে সেটাই কাম্য।
বাংলাধারা/এফএস/এআর