২৪ অক্টোবর ২০২৫

নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে দিচ্ছে সরকার? বাড়ছে বিতর্ক ও প্রতিবাদ

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা ঘিরে রাজনৈতিক, পেশাগত ও সামাজিক অঙ্গনে বিতর্ক তীব্রতর হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই প্রক্রিয়া পুনরায় গতি পাওয়ায় বিষয়টি ঘিরে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ বাড়ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এনসিটি পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) পদ্ধতিতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছে পিপিপি কর্তৃপক্ষ।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কেন?

সরকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, বিষয়টি সরকার নেতিবাচকভাবে দেখছে না। তবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে আন্তর্জাতিকমানের বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

সূত্র বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) ভিত্তিতে নিউমুরিং টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।

বিরোধিতার কারণ

তবে অনেকেই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছেন। তাঁদের যুক্তি, নিউমুরিং একটি সম্পূর্ণ সক্রিয় ও লাভজনক টার্মিনাল, যেখানে নতুন করে বিনিয়োগের বিশেষ প্রয়োজন নেই। ফলে একটি চলমান কার্যকর টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিলে তার লাভ ও নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে দেশের বাইরে।

বন্দর পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য মো. জাফর আলম বলেন, “যে টার্মিনালে কার্যক্রম চলছে, সেখানে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কী বিনিয়োগ করবে এবং তা কীভাবে বন্দর দক্ষতা বাড়াবে, সেটি স্পষ্ট নয়।”

চট্টগ্রামের বার্থ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে একরাম চৌধুরী বলেন, “বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিলে ভবিষ্যতে টার্মিনাল ফিরিয়ে নেওয়ার পর দেশীয় দক্ষতা না থাকলে সংকট তৈরি হতে পারে।”

প্রতিবাদ ও কর্মসূচির হুমকি

বন্দর সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, অপারেটর ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন। ‘দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও’ কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকার সিদ্ধান্ত না বদলালে তারা শিগগিরই বড় কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া আত্মঘাতী। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের করার মতো বিষয় নয়।”

এআরই/বাংলাধারা

আরও পড়ুন