মেজর সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কারান্তরীন বিতর্কিত ওসি প্রদীপের প্রতিহিংসার শিকার কক্সবাজারের নিপীড়িত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৬টি মিথ্যা মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। ওসি প্রদীপের দায়ের করা সাজানো মামলায় টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর জামিনে এসে প্রদীপ গংয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত তার ফৌজদারি মামলাটিও রেকর্ড করেনি কর্তৃপক্ষ। এতে একদিকে নিজের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, অপরদিকে মামলা-হামলায় জড়িতদের শাস্তি ও ন্যায় বিচারের দাবিতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আমাদের সময় মিডিয়া গ্রুপের কক্সবাজারস্থ আবাসিক সম্পাদক, দৈনিক কক্সবাজার বাণী ও জনতার বাণী সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফা খান।
তিনি অভিযোগ করেছেন, মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদ পত্র সম্পাদক পরিষদ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বছর দেড়েক আগে আবেদন করেছেন। আবেদন রিসিভ করলেও মামলাগুলো মিথ্যে প্রতিয়মান হবার পরও তা প্রত্যাহারের কোন উদ্যোগ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক ফরিদ ও তার পরিবার।
নির্যাতনে তার চোখ ও শরীরের জখম হওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। গত ছয়মাস চিকিৎসা নিতে ভারতে অবস্থান করাকালে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যে মামলাগুলো আবারো ওয়ারেন্ট হয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেছেন। এখন আবারও নতুন করে জামিন নিতে হচ্ছে। এসব করতে গিয়ে আর্থিক হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসার ব্যয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া সাংবাদিক ফরিদ।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান বলেন, কারামুক্তির পর মামলাগুলো মিথ্যে বুঝতে পেরে তা আইনী প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার বা চুড়ান্ত প্রতিবেদনে শেষ করা হবে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট অনেকেই কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই কথা রাখেননি। এখন মনে করিয়ে দেয়ার পরও আমলে নিচ্ছেন না কেউ। তাই আমার নামে করা সকল মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার ও এসব মামলা করতে জড়িতদের বিরুদ্ধে তার দায়েরকৃত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের আইনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিচার বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ফরিদ বলেন, মাদক ও ঘুষের বিরুদ্ধে লিখেছি বলে প্রদীপ ও তার লালিত মাদক ব্যবসায়ায়ীরা পাষবিক নির্যাতন করেছে।
৬টি মিথ্যা মামলায় টানা ১১মাস কারাগারে রেখেছে। আমি বর্তমানে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক বিপর্যয়ে আছি। এসব মামলা চালানোর আর্থিক সক্ষমতা নেই। তাই এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হলে বিনা অপরাধে আমার সাজা হতে পারে।
তার মতে, তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছি তা রেকর্ড না হওয়া মানে অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া। এতে করে দেশের বিচার ব্যাবস্থা, ন্যায় বিচার ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যায় । বিষয়টি নিয়ে সবার আন্তরিক সহায়তা কাম্য।
এদিকে, প্রতিহিংসার বশে সাংবাদিক ফরিদের দীর্ঘ কারভোগ,শারীরিক নির্যাতন, মামলা প্রত্যাহার না হওয়া ও জড়িতদের আইনের আওতায় না আনাসহ সাম্প্রতিক বাংলাদেশে বেড়ে যাওয়া সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশী-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তারা এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সাংবাদিক সুরক্ষা আইনসহ বিভিন্ন দাবীতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের বাসা থেকে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ার বাড়িতে কথিত অভিযানের কথা বলে গুলিসহ ২টি অস্ত্র, ৪ হাজার ইয়াবা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদের বোতল উদ্ধার দেখায় পুলিশ। কিন্তু এর অনেক আগেই ওই ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৩০ জুন ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় চাঁদাবাজি মামলা হলে ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তখন নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর ওই বছরের ২৮ জুলাই পৃথক আবেদনও করেন।
ফরিদের পরিবারের দাবী, উক্ত আবেদনের তদন্ত না করে উল্টো টেকনাফ থানা ও কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম মিরপুর থানা পুলিশের সহায়তায় ‘ওয়ারেন্ট’ দেখিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে না পাঠিয়ে অমানবিক ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এর ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ১১ মাসের কারাবাস শেষে ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট মুক্তি পান তিনি। এরপর আদালতে একের পর এক হাজিরা দিয়ে মামলায় নিয়মিত থাকলেও চিকিৎসার দেশের বাইরে থাকায় আবেদন দিলে সকল মামলা আবার ওয়ারেন্ট হয়ে গেছে। আবার সকল মামলায় জামিন নিতে বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। এ কারণে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি করেন তিনি।













