৩০ অক্টোবর ২০২৫

নিরাপত্তাহীনতায় সোনারবাংলা ট্রেনের যাত্রীরা

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»

দেশের সবচেয়ে দ্রুতগামী সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিশেষ করে ননএসি কোচের যাত্রীরা অনেকটা আতঙ্কেই ট্রেনে ভ্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছে। কারন ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ছাড়াও ইতোমধ্যে ট্রেনের ছাদে ছিনতাইকারীদের অবস্থান থাকায় সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রীরা অনেকটাই অনিরাপদ। এদিকে বৈশাখের আগমন অতি সন্নিকটে হওয়ায় গরমের তীব্রতাও বেড়েছে। কিন্তু ছিনতাইকারী ও পাথর নিক্ষেপকারীদের আতঙ্কে ননএসি কোচের জানালা দরজা বন্ধ রাখা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, শনিবার রাতে সোনারবাংলা ট্রেনটি আখাউড়া স্টেশনে থামিয়ে যাত্রীদের পক্ষে ছিনতাইকারীদের পাকড়াও করতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি ট্রেনের জিআরপি সদস্যরা। এতে ছিনতাইকারীরা জিআরপি পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে গ্রীণ সিগন্যাল পেয়েছে এমন অভিযোগ যাত্রীদের। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টায় প্রতিবেদক বিমানবন্দর স্টেশনে নামা পর্যন্ত আখাউড়া স্টেশনে ট্রেনটিকে থামাতে যেমন দেখেননি তেমনি ট্রেনে থাকা জিআরপি সদস্যরাও কোচটি পরিদর্শনে আসেননি। এমনকি আখাউড়া স্টেশনে ছিনতাইকারীদের পাকড়াও করতে ট্রেনের গার্ড, চালককেও ট্রেন থামাতে কোন নির্দেশনা দেননি। ফলে ট্রেন নিজস্ব গতিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে আধঘন্টা বিলম্ব করেছে অনির্ধারিত যাত্রা বিরতি ও আতঙ্কিত অসুবিধার কারনে।

প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, গত ৯এপ্রিল শনিবার চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে বিকেল ৫টায় সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। কুমিল্লার শশিদল স্টেশন পার হলে হঠাৎ করে ১০২৯ নং কোচের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রায় ৫/৭ মিনিট পর আবার অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখেন যাত্রীরা। রাত ৭টা ৪৬ মিনিটের সময় কুমিল্লার রাজাপুর স্টেশনে অনির্ধারিত যাত্রা বিরতি করে। কারন ঢাকা থেকে নিম্নগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ক্রসিং পড়ে যায় ওই স্টেশনে। এসময় কয়েক ছিনতাইকারী ট্রেনের ছাদে উঠে যায় বলে জানিয়েছে কোচে থাকা এটেনডেন্ট।

অভিযোগ রয়েছে এসব ছিনতাইকারীরা ননএসি কোচকে টার্গেট করে কারন শুধুমাত্র ননএসি কোচগুলোরই রাতে দিনে জানালা খোলা থাকে। এসব কোচ থেকে জানালা দিয়ে মোবাইল ও স্বর্ণালংকার ছোঁ মেরে ছিনতাইয়ের সুযোগ থাকে। ছিনতাইকারীরা প্রথমে ১০২৯ নং নন-এসিকোচের ৩৭ ও ৩৮ নং সিটের আনিসুর রহমান নামের এক যাত্রীর মোবাইল টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ওই যাত্রী চিৎকার শুরু করলে অন্য যাত্রীরা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে কোচের ছাদে কয়েকজন ছিনতাইকারী অবস্থান নিয়েছিল। এসময় আরো কয়েকজন যাত্রী চিৎকার শুরু করলে তারা অন্য কোচের ছাদে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে এটেনডেন্ট এসে সিটের পার্শ্বে থাকা বডি সাইড জানালার গ্লাস সার্টারটি নামিয়ে দেয়।

আবার ট্রেনটি আস্তে আস্তে চলতে শুরু করলে এবার রেল লাইনের পাশে দাড়িয়ে থাকা কয়েকজন ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। এতে যাত্রীরা আরো বেশী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এক পর্যায়ে ওই কোচের এটেনডেন্ট রাকিব ও আরো একজন মিলে যাত্রীরাসহ কোচের সব গ্লাস সার্টারগুলো পরিপূর্ণভাবে নামিয়ে দেয়। এতে যাত্রীরা আতঙ্ক থেকে কিছুটা স্বস্তি পেলেও কোচের ভেতর গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ফলে আবারো গ্লাস সার্টারের অর্ধেক পরিমাণ তুলে রাখতে বাধ্য হয়।

এ বিষয়ে যাত্রীরা এটেনডেন্টদের শরনাপন্ন হয়েও কোন লাভ হয়নি বরং এটেনডেন্টরা যাত্রীদের নিরাপত্তায় কিছুক্ষণ পর পর এসে তাগিদ দিয়েছেন ‘জানালার পাশে মোবাইল ব্যবহার করবেন না’‘যে কোন সময় মোবাইল টেনে নিয়ে যেতে পারে দুর্বৃত্তরা’। এমন পরিস্থিতেতে জিআরপি পুলিশের আশ্রয় নিতে চাওয়া হলে এটেনডেন্টদের মাধ্যমে ট্রেনে থাকা জিআরপিদের জানানো হলেও কেউ সাড়া দেয়নি। উল্টো জিআরপি সদস্যরা ট্রেনের খাবার গাড়িতে অবস্থান নিয়ে নিজেদের ভুঁড়িভোজে ব্যস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন এটেনডেন্টরা।

টেনের ১০২৯ নং কোচের নিরাপত্তা চেয়ে জিআরপি’র এসপি প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীকে মুঠোফোনে প্রতিবেদক জানানোর চেষ্টা করেছেন। রাত ৭টা ৫৮ মিনিটের সময় মোবাইলের অপরপ্রান্ত থেকে জিআরপি’র এসপি জানান তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু রাত ৮টা ০৩ মিনিটের দিকে এসপি সাহেব মোবাইলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ‘আখাউড়া স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে ছিনতাইকারীদের নামিয়ে আইনের আওতায় আনা হবে’। এই তথ্য পেরণের পর যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গুড়ে বালি। আখাউড়া স্টেশনে ট্রেনও থামানো হয়নি ছিনতাইকারীও রক্ষা পেল আইনের হাত থেকে।

আরও পড়ুন