২৩ অক্টোবর ২০২৫

নিরাপদ কখন হবে আমাদের সড়ক!

ফেরদৌস শিপন »

মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু কোনো অকালমৃত্যু কাম্য নয়। তার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু একটি গুরুতর জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর প্রকাশিত হয়। বিষয়টি গভীর শঙ্কার ও উদ্বেগজনক। অথচ সড়ক নিরাপদ করতে আইন হয়েছে। কিন্তু সড়ক নিরাপদ হয়নি। আরও অনিরাপদ হয়েছে। প্রতিদিন সড়কে মূল্যবান প্রাণ যাচ্ছে। সড়কে আর কত মৃত্যুর মিছিল দেখবো আমরা।

খবর বেরিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারা মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল সংলগ্ন হাসিনাপাড়ায় পিকআপচাপায় পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ঘটনাস্থলে চার ভাই ও পরে হাসপাতালে আরো এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় আহত হন একই পরিবারের আর দুই ভাই ও এক বোন। জানা গেছে, পারিবারিক পূজা শেষে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় কক্সবাজারমুখী একটি পিকআপ ভ্যান ধাক্কা দিলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

খবরে জানা গেছে, মাত্র ১১ দিন আগে ওই ঘটনায় নিহত ও আহতদের মা মানু বালা তার স্বামীকে হারিয়েছেন। জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে একটি শোক কেটে উঠতে না উঠতেই স্বামীর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের দিনেই একসঙ্গে পাঁচ ছেলেকে হারিয়েছেন তিনি। একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের মরদেহ দেখে শোকে পাথর হয়ে গেছেন মা মানু বালা শীল। এই পরিবারটির মতো দুর্ঘটনায় অনেক পরিবার পথে বসছে যা কারোরই কাম্য নয়।

প্রতিদিন গণমাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি সড়ক দুর্ঘটনার অসংখ্য বীভৎস ছবি, দেখতে পাই স্বজন হারানোদের আহাজারি। আমাদের সড়ক যেন এখন মরণফাঁদ। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন অকালে প্রাণ ঝরছে না, প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বাতাস ভারী হয়ে উঠছে না।

আমরা মনে করছি, দুর্ঘটনা সংঘটনকারী চালকদের শাস্তি না হওয়া, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, আনফিট গাড়ি রাস্তায় চালানো, সড়ক যোগাযোগে অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারণে ইদানীং সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিবহণ মালিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সমন্বিত আন্তরিক, সচেতন, দৃঢ় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করি।

সময়ের চাহিদা ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণীত হয়। আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে আইনে ১৪টি অধ্যায়ে ১২৬ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তবুও এই মরণফাঁদ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। তার আগে আমরা দেখেছি সড়ক নিয়ে আন্দোলনে নামা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন উল্টো শাহজাহান খানের হুমকির মুখে পড়েন। থমকে গেছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনও।

আমরা মনে করি, সরকার-জনগণ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করার মধ্যদিয়ে দুর্ঘটনা কমে আসবে এমনটি কাম্য। সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সড়কপথে দুর্ঘটনা রোধ করা এবং পরিবহন খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আইনের যথার্থ প্রয়োগ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা। আগামী দিন হোক দুর্ঘটনামুক্ত। সফল হউক নিরাপদ সড়ক চাওয়া, আর সড়ক দুর্ঘটনায় নয়, স্বাভাবিক মৃত্যুই হোক কাম্য। প্রতিটি নাগরিক বেঁচে থাক আজীবন।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাধারা ডটকম।

আরও পড়ুন