২৯ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচিত হলে বিশ্বমানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলবে ডা. শাহাদাত

আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘোষণা দেন। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র পদে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি। তার বয়স ৫৩ বছর। ৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তিনি। চসিক নির্বাচন প্রসঙ্গে তার সাথে কথা বলেছেন বাংলাধারার প্রতিবেদক ইয়াসির রাফা

রাফা : মনোনীত হবার পর প্রতিক্রিয়া কেমন অনুভব করেছেন?

ডা. শাহাদাত হোসেন : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আমাকে ধানের শীষে মনোনীত করায় আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। আমার দলীয় চেয়ারপারসন , কমিটির সম্মানিত সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরের সকল নেতা-কর্মীর পাশাপাশি চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ইতোমধ্যে আমি বিভিন্ন মিডিয়াকে বলেছি যে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। যেহেতু ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ও চট্টগ্রামের উপ-নির্বাচনে সরকার জনগণকে ভোট সেন্টার মুখি করতে পারেনি- এটা সরকারের জন্য বড় ব্যার্থতা। অর্থাৎ যারা মেয়র হয়েছেন তারা ৮০ শতাংশ লোকের মেয়র হতে পারেনি। তারা হয়তোবা ২০ শতাংশ লোকের মেয়র হয়েছে-তাও জোড়াতালি দিয়ে। তাই এসব দৃষ্টিকোণ থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন গুরুত্ব বহন করছে।

রাফা : নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম নগরী নিয়ে কি পরিকল্পনা রয়েছে আপনার। কি কি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?

ডা. শাহাদাত হোসেন : চট্টগ্রামের মূলত অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। বিশেষ করে আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি জলাবদ্ধতার মত সমস্যা এখনো আছে। এছাড়া গ্রিন ও হেল্দি সিটিসহ সবুজ বিল্পবের যে পরিকল্পনা, পরিছন্ন শহর, মাতৃসনদ সেন্টার, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার ইত্যাদি কাজগুলোকে আবার সঠিকভাবে করতে হবে এবং শিক্ষার একটা ব্যাপার রয়ে গেছে। প্রতিটা ওয়ার্ডে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা যেন বাধ্যতামূলক করা হয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এ দুটো জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ।

‘অন্যদিকে কর্ণফুলি নদী আমাদের সম্পদ। এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা একটা ইকোনোমিকাল জোনের কথা চিন্তা করতে পারি। আমাদের খাতুনগঞ্জের যে ঐতিহ্য তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে -এদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের বন্দরের যে কাঠামো তা বানাতে ও উন্নত করতে হবে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম একটি পর্যটন এরিয়া। এখান থেকে, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ প্রত্যেকটি দৃষ্টিনন্দন এরিয়াতে আমরা যেতে পারি। এশিয়া, ইয়োরোপসহ যেসব দেশের ফরেনার আমাদের এখানে পর্যটক হিসাবে আসে সেই দেশগুলোকে যদি বোঝাতে পারি চট্টগ্রাম থেকে নানা দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটন এরিয়াতে যাওয়া খুব সহজ, তাহলে চট্টগ্রাম আমাদের ইকোনোমিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। একই সাথে পর্যটনশিল্পে আন্তর্জাতিকভাবে অন্যতম একটি শহরে পরিণত হবে।’

রাফা : আপনি তো একজন ডাক্তার। সেক্ষেত্রে শিশু-কিশোর ও নাগরিকের মানবিক উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কি?

ডা. শাহাদাত হোসেন : শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ও নাগরিকের মানবিক উন্নয়নের জন্য চাই উন্মুক্ত স্থান ও খেলার মাঠ। মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস ফেলবার অধিকার শিশুটির জন্মগত অধিকার। শিশু কিশোরদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে খোলা জায়গার প্রয়োজনিয়তা অনেক। সারাদিন কর্মব্যস্ততার পরে সেখানে অবসরে একটু বসা যায়, কথা বলা যায় সমমনষ্ক কারো সাথে, প্রকৃতির সাথে একাত্ব হয়ে মন হালকা করা যায় তেমন একটু খোলা জায়গার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

‘বিশেষ করে শৈশব কৈশোরের দূরন্তপনা, যা ভবিষ্যত নাগরিকদের সুষ্ঠুভাবে গড়ে উঠার অন্যতম শর্ত তা আজ আটকা পড়েছে টিভি কার্টুন আর কম্পিউটার গেম্স-এর বেড়াজালে। আমাদের পর্যাপ্ত খেলার জায়গা না থাকায় শিশু-কিশোররা ঘরে বসে ইলেকট্রনিক যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়ছে। হচ্ছে মস্তিষ্ক নির্ভর খেলায় অভ্যস্ত, শরীর নির্ভর খেলা ভুলে যাচ্ছে, শারীরিকভাবে অলস হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে না, এতে প্রায় শিশুরা খিটখিটে মেজাজের, অপরিপক্ক আচরণ এবং বিপথগামী পথে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দিন দিন বেড়েই চলেছে।’

‘এক সময় শহরে অনেক খোলা জায়গা ছিল যা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সে সকল খোলা জায়গা অপরিকল্পিতভাবে দালান কোঠা নির্মাণের ফলে আজ প্রায় বিলীনের পথে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে তা আনুষ্ঠানিক ও আইনগতভাবে খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার কারণে বিভিন্নভাবে দখল করার পায়তারা চলছে। তাই খেলার মাঠসমূহ কোনভাবে যেন হারিয়ে না যায় সে জন্য এ সব মাঠকে আনুষ্ঠানিক ও আইনগতভাবে খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াসহ প্রতিটি পাড়া ও মহল্লায় প্রয়োজন অনুয়ায়ী এক বা একাধিক খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা ও জনসংখ্যার অনুপাতে নুন্যতম প্রয়োজনীয় উন্মুক্ত স্থান করতে চাই।’

রাফা : আপনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে আছেন। যদি মেয়র নির্বাচিত হন সেক্ষেত্রে পদ ও দলকে কিভাবে সমন্বয় করবেন?

ডা. শাহাদাত হোসেন : মেয়র হিসাবে যদি আসতে পারি আল্লাহর রহমতে সেক্ষেত্রে দলের দায়িত্ব নেয়ার মতো যোগ্য আরো অনেকেই আছে। দলের দায়িত্ব দল থেকে পালন করা হবে। আমি আসলে চাচ্ছি চট্টগ্রামের জনগণ উপকৃত হোক। অনেক বছর ধরে চট্টগ্রামে আছি। এ শহরের মানুষের প্রতি তো দায়বদ্ধতা রয়েছে। ছোটবেলা থেকে আমি বাকলিয়াতে বড় হয়েছি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও জনগণের জন্য কিছু করতে চাই। সেক্ষেত্রে সমন্বয় করেই কাজ করবো।

রাফা : আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. শাহাদাত হোসেন : আপনাকে ও বাংলাধারাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন