বাংলাধারা প্রতিবেদন »
কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা এখন প্রধান বৈশ্বিক সমস্যা। এ অবস্থার কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে চরম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যার প্রভাবে কচ্ছপ গতি দেখা দিয়েছে দেশের বৃহত্তর নির্মাণ শিল্প খাতে।
করোনা ভাইরাসের থাবা ও গত বছরের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সমুদ্রে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল, রেল পরিবহন ও আকাশপথে। ফলে এসব সেক্টরে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক সিডিউল বিপর্যয়। পাশাপাশি আন্তজাতিক রুটে বিমান পরিবহন কমে যাওয়ায় পোষাক শিল্পখাতসহ অন্যান্য সেক্টরে চরম মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। আর এতে করে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত গুনতে হচ্ছে লোকসানের বোঝা। বিশেষ করে বিপর্যয় অবস্থা তৈরি হয়েছে নির্মাণ শিল্পখাতে। হঠাৎ করেই রড, সিমেন্ট ও পাথরের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে পড়েছে বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো। মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে মারাত্মকভাবে। এতে করে নির্মাণ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা পড়েছে চরম বেকায়দায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় একবছর যাবৎ দেশের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মত পাথর, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি না পাওয়ায় ব্যহত হচ্ছে কাজের অগ্রগতি। এই অবস্থায় দেশের সেতু, সড়ক ও ইমারত নির্মাণ অগ্রগতিতে অনেকটা ভাঁটা পড়েছে, পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে নির্মাণ ব্যয়। গেল বছরগুলোতে একই সময় নির্মাণ কাজের যে অগ্রগতি ছিল এখন তা পঞ্চাশ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এর প্রধান কারণ নির্মাণ সামগ্রী সঠিক সময় সরবরাহ ব্যহত হওয়া। নির্মাণ শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল পাথরের চাহিদার অধিকাংশ আমদানি করা হয় ভারত ও ভূটান থেকে। এছাড়াও দুবাই, চায়না, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকেও পাথর আমদানি করা হয়ে থাকে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে জাহাজ ও রেল সেক্টরে দেখা দিয়েছে সিডিউল বিপর্যয়। তাই সঠিক সময় চাহিদা মত নির্মাণ শিল্পের প্রধান এই কাঁচামাল কোনভাবেই সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, দেশে যে পরিমাণে রড ও সিমেন্ট উৎপাদন হয়, তাতে চাহিদা না মেটায় আমদানি নির্ভর হতে হয় দেশের নির্মাণ শিল্পকে। তবে রড-সিমেন্টের কিছুটা যোগান দেশের উৎপাদনে পূরণ হলেও, বিশ্ববাজারে রডের কাঁচামালের দাম বাড়ায় গত দুই মাসে টন প্রতি রডের দাম বেড়েছে ১২-১৩ হাজার টাকা। তাতে বিপাকে পড়েছেন ব্যক্তি খাতে বাড়ি নির্মাণকারী, আবাসন ব্যবসায়ী ও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারেরা। দেশে বছরে রডের চাহিদা ৫৫ লাখ টনের বেশি। সেই হিসাবে মাসে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টন রড দরকার হয়, শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা আরও বেশি। হিসাব করে দেখা যায়, টনপ্রতি গড়ে ১২-১৩ হাজার টাকা বাড়লে প্রতি মাসে গ্রাহকদের বাড়তি ব্যয় দাঁড়াবে সাড়ে পাঁচ শ কোটির টাকার বেশি। একই কারণে বেড়েছে দেশে উৎপাদিত সিমেন্টের দাম। সিমেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছে, সিমেন্ট খাতের পাঁচটি কাঁচামালই আমদানির্ভর। বন্দরে জাহাজজট ও সিডিউল বির্পযয়ের কারণে গত বছর থেকে কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।
দেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর শুরু করা তাদের নির্মাণাধীন ভবন গুলোর অধিকাংশের কাজ বন্ধ হয়ে আছে শুধুমাত্র পাথর, রড ও সিমেন্টের কারণে। আর ক্রেতাদের চাহিদার কারণে যাদের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে, তাদের পাথর, রড ও সিমেন্ট কিনতে হচ্ছে অনেক বেশি দাম দিয়ে। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল হক তালুকদার এ বিষয়ে বলেন, করোনা মহামারীতে নির্মাণ শিল্প স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে করে বিশাল একটি কমক্ষম জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার যদি এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন না করে তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে এ খাত। এজন্য সরকারকে অতি দ্রত মূল্য সমন্বয় করে নির্মাণ খাতের গতি বৃদ্ধি করতে হবে। তাঁর মতে, অধিকাংশ প্রকল্পগুলোই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ঠিকাদারেরা সঠিক সময়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে যাবে। সেসাথে যথা সময়ে প্রকল্পগুলোর কাজ সমাপ্ত না হলে প্রকল্পগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি পাবে মারাত্মকভাবে। এতে করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













