চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে অবস্থিত শাহীন স্কুল অ্যান্ড ক্যাডেট কোচিংয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, গেলো শনিবার (১৭ জুন) ক্লাস চলাকালীন সময়ে পড়া না পারায় দশম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীকে স্টিলের পাইপ দিয়ে আঘাত করেন সহকারী শিক্ষক তানভীর ইসলাম। এতে শিক্ষার্থীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, এখনও ব্যথায় কাতরাচ্ছে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থীর হাতে ও পিঠে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শিক্ষক তানভীর ইসলামের ভয়ভীতির কারণে শুরুতে বিষয়টি গোপন রাখলেও পরবর্তীতে পরিবারের কাছে ঘটনা খুলে বলে তারা।
আহত এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, “প্রথমে আমার সন্তান কিছু বলতে চায়নি। পরে হাত-পিঠে আঘাতের দাগ দেখে জিজ্ঞাসা করলে সে কেঁদে কেঁদে সব বলে।” অন্য এক শিক্ষার্থী জানায়, “ব্যথায় সারারাত ঘুমাতে পারিনি। এখনও শরীরের অনেক জায়গায় প্রচণ্ড ব্যথা।”এক শিক্ষার্থীর ভাই বলেন, “সারা শরীরে এখনো আঘাতের চিহ্ন। যন্ত্রণায় সারা রাত কেঁদেছে আমার বোন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক হোসাইন মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম বলেন, “পড়া না পারায় সামান্য শাসন করেছি। তবে আমি লজ্জিত এবং তাদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।”
শাহীন স্কুল অ্যান্ড ক্যাডেট কোচিংয়ের পরিচালক ও অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বলেন, “শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটাবে না মর্মে তিনি মুসলেকা দিয়েছেন।”
উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকার ১১ ধরনের শারীরিক এবং ২ ধরনের মানসিক শাস্তিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।
এর আগেও শাহীন স্কুলের বিভিন্ন শাখার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ফি আদায়, শিক্ষার্থীদের বেতন নিয়ে উধাও হওয়া এবং বই বাণিজ্যের মতো একাধিক অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
জনমনে প্রশ্ন উঠছে—নামধারী কোচিং ও স্কুলের নামে গড়ে ওঠা এইসব প্রতিষ্ঠানে যদি অনিয়ম, নির্যাতন আর লোভের রাজত্ব চলতেই থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
এআরই/বাংলাধারা