২৪ অক্টোবর ২০২৫

পদ্মার দুই তীরে উৎসবের রঙ

মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায় ১৩ বছর ধরে চায়ের দোকান চালান আমজাদ বেপারী, এর সংগে ভেষজ ওষুধ তৈরি করে বিক্রিও করেন। দোকানের মালামাল আর হার্বাল উপকরণ আনতে মাসে অন্তত দুইবার ঢাকায় যাতায়াত করতে হয় ৭৬ বছর বয়সী আমজাদকে। সেই যাত্রায় এতদিন ফেরি কিংবা লঞ্চের ঝক্কি পোহাতে হত প্রতিবার। পদ্মা সেতু চালু হলে যাতায়াতে দুর্ভোগ আর থাকবে না বলেই মনে করছেন আমজাদ; ’চাইলে ১০ বারও যাইতে পারমু’- এমনই তার বিশ্বাস।

সেতু হওয়ায় যাতায়াত সহজ হয়ে ওঠার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এক বাসে উঠমু আর চলে যামু। এক টানে ঢাকা। আবার এক টানে বাড়ি!’

শনিবার সেতু উদ্বোধনের পর পুরনো বাংলাবাজার ঘাটের যে জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা হবে, সেই মঞ্চ থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে আমজাদ বেপারীর দোকান। নিজের দোকানের ঠিক পেছনেই তার বাড়ি।

দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরির পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে বেশ উচ্ছ্বসিতই দেখা গেল তাকে।
আমজাদ বেপারীর মত এমন আনন্দের মুহূর্ত উদযাপন করছেন পদ্মা পাড়ের সবাই। শনিবার সারাদিন জনসভা এলাকা ঘিরে মানুষের উপস্থিতি সেটাই জানান দিচ্ছে।

শুক্রবার সকালে সেতুর দুই প্রান্তে ঘুরে দেখা গেল, বর্ণিল আয়োজন চলছে পদ্মার দুই পাড়েই। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সড়ক-মহাসড়ক। সর্বত্র সেই উৎসবের আমেজ। আয়োজনের সাথে জড়িত কর্মীরা ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে। আইনশঙ্খলা বাহিনী তৎপর অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্ন রাখতে।

মাহমুদ অভিপদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে সেজেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত নানা ব্যানার ও ফেস্টুনে । ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিদুপুরে মাওয়া প্রান্তে মানুষের উপস্থিতি তেমন দেখা না গেলেও শিবচরের চিত্র ছিল ভিন্ন। বিভিন্ন বয়সী বিপুল সংখ্যক নারী, পুরুষ, শিশুকে দেখা গেল জনসভার চৌহদ্দির আশপাশে।

জনসভাস্থলের কিছুটা দূরের নওডোবা এলাকা থেকে দুপুরে ওই এলাকা ঘুরতে এসেছিলেন গৃহিনী অজিফা খাতুন। তার হাত ধরে এসেছে দুই সন্তান ও এক বোন। আজিফা বললেন, ‘কালকেতো প্রচুর লোকজন হবে, আসতে পারব কি-না জানি না। এ কারণে আজকে দেখে যাচ্ছি। পদ্মা সেতু হলে আমাদের কষ্ট আর থাকবে না। এখন চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগে ঢাকা যাইতে। সেতু হইলে এক-দেড় ঘণ্টায় চলে যেতে পারব।’

মাহমুদ অভিজনসভা ঘিরে বুকে জড়ানোর জন্য নৌকা, পদ্মা সেতু, জাতীয় পতাকার রেপ্লিকা বিক্রি করতে দেখা গেল। অনেকের পরনে লাল-সবুজের সাজ। পদ্মাপাড়ের জনসভা ঘিরে বর্ণিল আলোকসজ্জাও দেখা গেল শুক্রবার সন্ধ্যায়। আয়োজন দেখতে আসা লোকজনকে সরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল আইনশঙ্খলা বাহিনীকে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে মাওয়া থেকে কাঁঠালবাড়ি ও মঙ্গলমাঝির ঘাটে মধ্যে ফেরি চলাচল কমে আসবে। ক্রমান্বয়ে ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে বলেই অনেকের ধারণা।

মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর-শরীয়তপুরের রুটের ফেরিতে ২৮ বছর ধরে কাজ করেন ফরিদপুরের শালথা উপজেলার খন্দকার হুমায়ুন কবির। পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের যাতায়াতও তাই ফেরিতেই হত।

বেগম সুফিয়া কামাল ফেরির ক্যান্টিনে সরকারি বেতনের চাকুরে তিনি। সেখানে তার সাথে কাজ করেন আরও ১৬ জন কর্মী।
নিজেদের ব্যবসা কমে আসার কথা বললেও মানুষের কষ্ট লাঘব হবে, তা ভেবেই তিনি শান্তি পাচ্ছেন।

‘সেতু চালু হলে মানুষের বড় উপকার হবে। মানুষ কত কষ্ট করছে আমিতো দেখছি। পদ্মা পার হতে এক-দুদিন লাগতেও আমি দেখছি। মানুষকে অনেক অপদস্ত হতেও দেখছি। সেটাতো আর থাকবে না।’

এই রুটে ফেরি বন্ধ হলে জীবিকার কী হবে- এমন প্রশ্নে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ফেরি এই রুটে না চললেও অন্য রুটেতো চলবে। আমরা হয়ত অন্য রুটে চলে যাব।’

বেগম সুফিয়া কামাল ফেরিতেই কথা হয় মাদারীপুরের বাসিন্দা কাদের গণির সাথে। পদ্মা সেতু চালু হলে তার মত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘব হবে, সে কথা তিনিও বললেন।

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মী বলেন, ‘ফেরির এই খাবার হয়ত মিস করব। কিন্তু যেই কষ্ট, যেই দুর্ভোগ ছিল, তাতো আর পোহাতে হবে না।’

শুক্রবার বিকালের দিকে বাংলাবাজারে জনসভাস্থল পরিদর্শনে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ সময় নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন তিনি।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও জনসভা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক রয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এখন যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছেন, সব নিরাপত্তা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তৈরি হয়ে আছে। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে। আমাদের নৌপুলিশ, পুলিশ, র‌্যাব, প্রয়োজনবোধে বিজিবিও আসবে।’ সূত্র : বিডিনিউজ।

আরও পড়ুন