গিয়াস উদ্দিন, পটিয়া »
চট্টগ্রামের পটিয়া আদালতের প্রতিদিনকার দাপ্তরিক কাজ পরিচালিত হচ্ছে পরিত্যক্ত ভবনে। আদালতের এ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ১৯৮৫ সালে। ১৯৮৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পটিয়া আদালত ভবনের জন্য কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি কোনো মহল।
চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলার ৭টি চৌকি আদালত রয়েছে পটিয়ায়। এই পাঁচ আদালতে জেলার ৫টি থানার প্রায় ২৬ হাজারেরও বেশি মামলা বিচারাধীন আছে। ভবন, আবাসন, যানবাহন, লোকবল, আসবাবপত্র সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এইসব আদালত।
অধিকাংশ আদালতের কোনটি বাঁশের বেড়া টিনের ঘরে, কোনটি টিন শেড সেমি পাকা মরচে ধরা ও জরাজীর্ণ দালানে চলছে বিচার কাজ। পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী, কর্ণফুলীতে কর্মরত বিচারকদের জন্য থাকা বাসভবনগুলোও পরিত্যক্ত।
অন্যদিকে জেলার এই ৭টি চৌকি আদালতে ৮০টির মতো বিচার বিভাগীয় কর্মচারীর পদ রয়েছে। দীর্ঘ দিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের পদ শূন্য রয়েছে দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি। ৭টি চৌকি আদালতের মধ্যে বিচারক নেই ২টি আদালতে। ফলে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের। দিনে দিনে মামলা জট বাড়ছে, বাড়ছে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা।
জানা যায়, চট্টগ্রামের পটিয়ার যে ভবনে ‘চৌকি আদালতের’ কার্যক্রম চলছে সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ১৯৮৫ সালে। এরপরও এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছোট ছোট কামরায় বসে কাজ করছেন বিচারকরা। প্রায় দেড়শত বছর আগে ব্রিটিশদের নির্মিত টিন শেড আর বাঁশের বেড়ার জরাজীর্ণ এ ভবন।
এজলাস কক্ষে বৃষ্টির পানি পড়ে এবং সূর্যের আলো ঢুকে পড়ে। সামান্য বৃষ্টিতে নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান রেকর্ডপত্র। আদালতের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় ঝুঁকির মধ্যে আছেন বিচারকরা। পটিয়া চৌকি আদালতে একটি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, তিনটি সিনিয়র সহকারী জজ ও দুটি সহকারী জজ আদালত রয়েছে। এর বাইরে জুডিসিয়াল হাকিমের আদালত রয়েছে একটি।
প্রায় ২৬ হাজার মামলা বিচারাধীন এই ৭টি আদালতের মধ্যে বিচারক শূন্য রয়েছে দু’টি। যে পাঁচজন বিচারক দায়িত্ব পালন করছেন পটিয়া চৌকি আদালতে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাসকামরা ও আবাসন ব্যবস্থারও অভাব রয়েছে। বিচারপ্রার্থীদের জন্য একটি শৌচাগারও নেই। সীমানা প্রাচীর না থাকায় আদালতের জমি দখলের অপচেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ আছে।
পটিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপক কুমার শীল জানান, ১৮৮৫ সালে পটিয়া চৌকি আদালত তৈরি হয়। শতবর্ষী জরাজীর্ণ পটিয়া চৌকি আদালত ভবনের জায়গায় একটি নতুন ভবন নির্মাণ করার দাবি জানিয়ে বহু বছর থেকে আমরা সরকারের কাছে ধর্না দিচ্ছি। ২০১০ সালে ২০ কোটি টাকায় ৬ তলা ভবন নির্মাণের একটি প্রস্তাব যায় মন্ত্রণালয়ে। পরে সেটি ১০ কোটি টাকায় তিন তলা ভবন নির্মাণ হওয়ার প্রস্তাব পাশ হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।
‘কিন্তু ভবন হচ্ছে, হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ এখনো। কখন হবে সেটি আমরা জানিনা। তবে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য বর্তমান আদালত সরিয়ে নিতে একটি অস্থায়ী টিনশেড আদালত নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এই ছোট অস্থায়ী টিনশেডে ৭টি আদালতের জায়গা কোনভাবেই হবে না। ফলে দুর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করবে।’- বলেন অ্যাডভোকেট দীপক কুমার শীল।
এ বিষয়ে পটিয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি আরো জানান, পটিয়া আদালতের ব্যপারে আমি ব্যক্তিগত ভাবে পটিয়ার সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে অবগত করলে তিনি জানান, ‘আমার পটিয়ায় প্রায় সব সমস্যার সমধান হয়েছে বাকি আছে পটিয়া চৌকি আদালতের জন্য একটি ভবন নির্মাণ। ইনশাআল্লাহ্ আমি অচিরেই পটিয়া আদালতের জন্য নতুন ভবন নির্মাণে সর্বত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
বাংলাধারা/এফএস/এএ













