তারেক মাহমুদ »
প্রাণঘাতি করোনার মধ্যেও চট্টগ্রামসহ সারাদেশে কোরবানির পশুর হাট বসবে৷ তবে স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানা হয় সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখার দাবি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তা না হলে এই করোনায় পশুর হাটেই সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হবে বলে মনে করছেন তারা৷
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রামের মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানানো অসম্ভব৷ গত রোজার ঈদেও দোকানপাট খোলার সময় একই কথা বলা হয়েছে৷ ব্যক্তিগত পরিবহণের নামে মানুষকে চট্টগ্রাম ছাড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ এর কারণে ঈদের পরে করোনার প্রাদুর্ভাবও বাড়তে শুরু করে৷ এবার খোলা মাঠে গরুর হাট বসানো হলে আরো বড় সর্বনাশ হতে পারে বলে মনে করেন তারা৷
জানা গেছে, সারাদেশেই কোরবানির হাটের জন্য একটি স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করছে৷ তারা বলছেন, পশুর হাট বসার এখনও অনেক দিন বাকি৷ তার আগেই চূড়ান্ত হবে স্বাস্থ্যবিধি৷ সাধারণত কোরবানির চার-পাঁচদিন আগে পশুর হাট বসে৷ কিন্তু সারাদেশ থেকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন হাটে পশু নেয়া শুরু হয় তারও এক সপ্তাহ আগে৷ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই বা ১ আগষ্ট বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে৷
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখনও সময় আছে, তাই পরিকল্পনা করে কোরবানির পশুর অনলাইন বাজার শক্তিশালি করতে হবে৷ কৃষক এবং বেপারীদের কাছ থেকে গরু সংগ্রহের চেইন গড়ে তুলতে হবে৷ যেভাবে এবার শাক-সবজি, খাদ্য শস্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷ যতদূর সম্ভব কসাইখানার ব্যবস্থা করতে হবে৷ গ্রামেও পশু কোরবানির জন্য নিয়ম করে দিতে হবে বলে মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ট্রমা ও অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বাংলাধারাকে জানান, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণে কোরবানি ও কোরাবানির পশু বিক্রি বাদ দেয়া যাবে না৷ কিন্তু হাট বসিয়ে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সোনার পাথর বাটি৷ এটা যদি করা হয় তাহলে আমি এই করোনায় পশুর হাটেই সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হবে বলে মনে করছি৷
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৪০৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে নগরীতে ৬ হাজার ৪৬৭ জন ও উপজেলায় ২ হাজার ৯৩৮ জন রয়েছেন। মৃত্যুর সিছিলে নাম লিখিয়েছেন ১৮৭ জন। নগরীতে এখন পর্যন্ত ১৩৬ জন ও উপজেলায় ৫১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা জয় করে বাড়ি ফিরেছেন ১০৮৪ জন। তাছাড়া হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৩ হাজার ৮৮৪ জন।
চট্টগ্রামে বর্তমানে মোট সাতটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনা নমুনা পরীক্ষায় বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরাই করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তরুণ ও মাঝবয়সীরা স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে হাটহাজারীতে। সেখানে এখন পর্যন্ত ৪১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া সাতকানিয়ায় ১৩৭ জন, সীতাকুন্ডে ২৫৫ জন, বোয়ালখালীতে ২৩০ জন, পটিয়ায় ২৭০ জন, আনোয়ারায় ৯১ জন, চন্দনাইশে ১৬৭ জন, ফটিকছড়িতে ১২৬ জন, মিরসরাইয়ে ৭৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া লোহাগাড়ায় ১২৬ জন, সন্দ্বীপে ৩৫ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১১১ জন, বাঁশখালীতে ১৩৩ জন ও রাউজানে ১৮৫ জন আক্রান্তের খাতায় নাম লেখান।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বাংলাধারাকে জানান, সামনে কোরবান আসছে। কোরবানকে উদ্দেশ্য করে পশুর হাট বসবে। আমরা বার বার এখন থেকেই বলে যাচ্ছি পশুর হাটগুলো যথেষ্ট দূরত্ব নিয়ে বসাতে হবে। দূরত্ব বজায় রেখে পশুগুলো দাঁড় করাতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে আলাপ আলাচনা করেছি। শহরকেন্দ্রিক হাটগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যারা বেচাকেনা করতে আসবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। না হয় নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনবো আমরা।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













