বাংলাধারা প্রতিবেদন »
মহামারি মোকাবিলায় সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ‘জেলা প্রশাসন’। যার নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক। করোনা সংকটের শুরু থেকেই তৎপর হয়ে দেশের যেসব জেলা প্রশাসক মানুষের নজর কেড়েছে তাদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নাম।
মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন এই দুই কর্মকর্তা। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, সেনাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় রেখে মনিটরিং করছেন সার্বিক কার্যক্রম। সেই সাথে প্রতিপালন করে যাচ্ছেন সরকারের যাবতীয় দিক নির্দেশনা। ত্রাণ সহায়তা থেকে শুরু করে সার্বিক কার্যক্রমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বসাধারণের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
সরকারের প্রতিটি দিক নির্দেশনা তিনি (জেলা প্রশাসক) মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আইন মেনে চলতে তারা যেমন কঠোর হচ্ছেন, অন্যদিকে পরম মমতায় হতদরিদ্র, ভিক্ষুক ও কর্মহীনদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারসামগ্রী।
পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। এই ঈদকে কেন্দ্র করে পশুর হাট, হাটকে কেন্দ্র করে জালটাকা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে হাট পরিচালনার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সর্বশেষ ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্বল্প পরিসরে, যথাসম্ভব লোক সমাগম কমিয়ে কোরবানির পশুর হাট বসানোর পাশাপাশি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্বসহ অন্যান্য সরকারি নির্দেশনা নিশ্চিত করতে তৎপর হয়েছে উঠেছেন এই তিন জেলা প্রশাসক।
সরকারি নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে মাঠে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। ১৩ হাজারের বেশি আক্রান্ত চট্টগ্রাম জেলায় আসন্ন ঈদুল আজহায় কিভাবে পশুরহাট ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তিনি বলেন, পশুরহাট আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর হাট হয়তো কিছুটা কম হবে, তবে আবার বেশি কমিয়ে দিলেও দেখা যাবে লোকজনের ভিড়টা এক জায়গায় বেশি হবে। এ জন্য যে কয়টা পশুরহাট বসবে বা আমরা যে কয়টা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো, মোটকথা আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই আমরা পশুরহাট দিবো।
মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, প্রত্যেকটা পশুরহাটে প্রবেশ এবং বাহির দুটো আলাদা পথ থাকবে এবং সেখানে হাত ধোয়ার জন্য সাবান-পানি থাকবে। যারা ইজারাদার তাদের আগে থেকেই বলা হবে এবং পশুরহাটে মাস্ক ছাড়া আমরা কাউকে প্রবেশ করতে দিবো না। যারা ক্রেতা থাকবে তারাও মাস্ক পরে ঢুকবে, যারা বিক্রেতা থাকবে তারাও মাস্ক পরা থাকবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আরও বলেন, অনলাইনভিত্তিক যে বেচাকেনা সেটাকে আমরা প্রাধান্য ও জনসাধারণকে উৎসাহ দিচ্ছি। ফার্মে ফার্মে যাতে গরু বেচা-কেনা করতে পারে, সেজন্যও তাদের আমরা উৎসাহিত করছি।
‘ফার্মগুলো যাতে গরু বিক্রি করতে পারে সেজন্য আমরা ফেসবুক পেজ খুলেছি, ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়াও পাওয়া গেছে। লোকজন রাত ১০-১২টা নাগাদ ফার্মে গিয়েও গরু কিনছে। এভাবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে কুরবানির হাটের সময়ে হাটে যাতে লোকসমাগম কম হয় এবং হাটে আসার পূর্বেই মানুষ যাতে বিভিন্ন ফার্মগুলো থেকে গরু কিনে এবং অনলাইনের মাধ্যমে- এটা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’- যোগ করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক।
এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুরহাট এবং জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে চলমান করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা মাঠে আছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ।
ঈদুল আজহায় জনসমাগম বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে পশুরহাটের বিষয়ে আমাদের রাঙ্গামাটিতে মাত্র একটি গরুরহাট বসবে। এখানে অন্যান্য জেলার মতো পশু নিয়ে এতো চাপ নেই। কারণ এখানে অর্ধেকের মতো লোকজনই হচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। প্রতিবছর আমাদের একটা গরুরহাট বসে পৌরসভায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এটাকে আমরা এবার দুটি স্থানে স্থানান্তর করেছি।
এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা এবার মাস্ক ছাড়া ক্রেতাদেরও হাটে ঢুকতে দিবো না। আবার বিক্রেতাদেরও ঢুকতে দিব না এবং একটা গরু থেকে আরেকটা গরু মিনিমাম তিন ফুট থেকে চার ফুট দূরত্বের খুঁটিতে বাঁধতে হবে। বয়স্ক, অসুস্থ বা বাচ্চাদের হাটে প্রবেশে নিষেধ করবো। সেখানে আমাদের জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন থাকবে, মাইকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক বলা হবে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সেখানে আমাদের মোবাইল কোর্ট থাকবে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য বিভাগের যে গাইড লাইন আছে, সে গাইড লাইনটা পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা মিটিং করেছি, প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি এবং সেসব বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। জুমার দিনে আমরা গরুরহাটে যাওয়ার সময়ে কিভাবে যেতে হবে, কোথায় কুরবানি দিতে হবে এসব বিষয়গুলো নিয়ে বিশদভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আসন্ন ঈদুল আজহায় করোনা প্রতিরোধে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রনে নেয়া উদ্যোগ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান যারা আছেন তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। যে হাটগুলো বসবে তার মধ্যে স্থায়ী এবং অস্থায়ী দুই রকমের হাটই আছে। প্রথমত, আমরা হাইওয়েতে এ বছর কোনো হাট দিচ্ছি না। দ্বিতীয়ত, হাটগুলোতে বাঁশ দিয়ে একটা ব্যারিফেরি তৈরি করা হবে- এতে প্রবেশ এবং বাহির দুইটা পথই আলাদা করা থাকবে।
মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রবেশপথে আমাদের কিছু গ্রাম পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবে। প্রবেশপথে মাস্ক পরে কিংবা হাত ধুয়ে হাটে প্রবেশ করলো কীনা এ বিষয়গুলো মনিটরিং করা হবে। হাটে গরুগুলো যেখানে রাখা হবে, সেখানে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই খুুঁটিগুলো গাঁথতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি যেটি আছে (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সরকারের) সে বিষয়ে আমাদের উপজেলা এসিল্যান্ড যারা আছে, তারা হাটবারে কিংবা হাটগুলো যেখানে বসে সেখানে মনিটরিং করবে।
আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুরহাটে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আরও বলেন, মূলত আমরা প্রচার এবং সচেতনতার জায়গাটুকুতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে নিয়মিত করছি, আমাদের যে পেইজ আছে সেখানেও প্রচারণা চালাচ্ছি। আর একটা কাজ আমরা করেছি সেটি হলো অনলাইন পশুরহাট। যারা চাষি, খামারি বা গরু পালন করে তাদের গরুর ছবি, মালিকের নাম-ঠিকানা মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে দিচ্ছি। তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেই যে কেউই গরু ক্রয় করতে পারবে।
‘আমরা অনলাইন মার্কেটের মাধ্যমে আমাদের ফেসবুক পেজে উপজেলাভিত্তিক গরু, ছাগল, মহিষ মালিকের নাম-ঠিকানাসহ আপলোড করছি। এখান থেকেও ক্রেতা-বিক্রেতা পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। এতে কিছুটা হলেও ভিড় কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি। আরেকটা নির্দেশনা সরকারের আছে যে- দুইজনের বেশি কেউ যেতে পারবে না। এটা মানিয়ে চলা যদিও কঠিন। কারণ পরিবারের সদস্য কে কার সেটা বুঝা মুশকিল। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো।’- যোগ করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ