২৬ অক্টোবর ২০২৫

কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প

‘পানি নেই’ এই অজুহাতে ৩০ বছর ধরে ঝুলছে ৫১৯ প্লট মালিকের স্বপ্ন!

শুধুমাত্র মাটির নিচে পানি নেই, এই একটি অজুহাতে সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পের ৫১৯ জন প্লট মালিকদের স্বপ্ন ঝুলে আছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও সিডিএ-ওয়াসার রশি টানাটানিতে আটকে আছে স্থাপনা নির্মাণও।

ওদিকে, নিজেদের কেনা জমিতে বাড়ি করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই প্রকল্পের পাঁচ শতাধিক প্লট মালিক। জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের ওপর চাপ কমাতে কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেকে সিডিএ প্রথম আবাসিক প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিলেন।

কিন্তু ১৯৯৪ সাল থেকে পানি সঙ্কট ও সরবরাহের ব্যবস্থার আশ্বাসেই ঝুলে রয়েছে প্রকল্পটি। ফলে, আবাসিকের বিশাল জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে ঝোপঝাড় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না এমনটাই ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক জানান, ‘বেশ কিছুদিন আগে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পানি কর্ণফুলী আবাসিকে সরবরাহের নিশ্চিতের কথা জানিয়েছিলেন ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ। কিন্তু এখনো আমাদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না।’

কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান জানান, ‘প্লট কেনার ৩০ বছরেও ঘর বানানোর স্বপ্ন পূরণ হলো না। প্রজেক্ট প্রোফাইলে গ্যাস, বিদ্যুৎ পানি সরবরাহের অঙ্গীকার থাকলেও তাঁরা কথা রাখেনি। পানির অভাবে জনবসতি গড়ে ওঠেনি। এ সমস্যা সমাধানে সিডিএ’কে বারবার লিখিত ভাবে বলেছি। সংস্থাটির মধ্যে উদ্যোগ নেওয়ার কোনো আগ্রহই দেখা যাচ্ছে না। এমনকি সিডিএ-ওয়াসার রশি টানাটানির মধ্যে আমরা আটকে রয়েছি।’

প্লট নেওয়া ভুক্তভোগী আবদুল মান্নান ও ফারজানা নাসরিন বলেন, ‘কী কারণে আমরা বাড়ি তৈরি করতে পারছি না, সিডিএ সে বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। মূলত সিডিএ’র অজুহাত পানি সমস্যা। সেক্ষেত্রে আমরা বলবো সিডিএ’র উদাসীনতাই দায়ী।’ তাঁরা আরও জানান, কর্ণফুলী নদীর বোয়ালখালী অংশের ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে এ আবাসিকে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওয়াসাকে চিঠিও দিয়েছেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘সিডিএ থেকেও আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। বিষয়টি এখন সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা সিডিএর আবাসন প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছি। পুরনো মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী অনেক আবাসন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। আমরা বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে অসমাপ্ত আবাসন প্রকল্পগুলোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবো।’

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘দীর্ঘদিন পানি সমস্যার কারণে প্রকল্পটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। তাই আশা করছি, পানি সংকটসহ সব ধরনের সমাধান করা হবে।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে প্রায় ৫০ একর জায়গায় ৫১৯টি প্লট সম্বলিত কর্ণফুলী (বামতীর) আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ।

এ প্রকল্পের প্রজেক্ট প্রোফাইলে বরাদ্দকৃত স্থানে নালা-নর্দমা, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, কবরস্থান, মার্কেট, নিরাপত্তা বেষ্টনী, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার সুপেয় পানি সরবরাহ করাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ থাকে।

আরও পড়ুন