রাঙামাটি প্রতিনিধি »
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনে বাঙ্গালীদের প্রতিনিধি না থাকাসহ এই আইনে প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে না পারায় পাহাড়ের বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের লোকজন বঞ্চিত হবে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের এমন অভিযোগের জবাবে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ার উল হক বলেছেন, পার্বত্য ভূমি কমিশনের বর্তমান আইন সম্পর্কে চলমান আন্দোলনে কমিশনের কিছুই করার নেই। এই আইন নিয়ে সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। সরকার কর্তৃক আইনটি সংশোধনের মাধ্যমেই আন্দোলনকারিদের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন সম্ভব। অন্যথায় বর্তমান আইনের আলোকেই ভূমি কমিশন তার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনরতদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছি। এটি সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিবো। পরবর্তীতে প্রাপ্ত নির্দেশনানুসারে এগিয়ে যাবে ভূমি কমিশন।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাঙামাটি জেলা পরিষদে কমিশনের নতুন কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
এসময় ভূমি কমিশন চেয়ারম্যান আন্দোলনকারিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা নিশ্চিত থাকুন, সংবিধান ও আইনের বহিঃভূত কোনো কিছুই আমরা (পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন) করবো না। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে গঠিত ভূমি কমিশন এর কারনে পাহাড়ের নাগরিকদের কেউর সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হবে না।
পার্বত্যবাসীদের ডকুমেন্টেশন এর জন্যই এই কমিশন এমন মন্তব্য করে চেয়ারম্যান বলেন, এটা একক কোনো গোষ্ঠির কমিশন নয়। যদিও এই ভূমি কমিশনের বিভিন্ন গোষ্ঠির প্রতিনিধিগণ এই কমিশনে আছেন, সেই ক্ষেত্রে তারা যেসব সিদ্ধান্ত নিবেন সেগুলো পার্বত্যবাসীদের পক্ষেই নিবেন বলেও মন্তব্য করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ার উল হক। বৈঠকের পূর্ব মুহুর্তে আন্দোলনকারি বাঙ্গালীদের সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে তাদের দাবি-দাওয়া উল্লেখিত স্মারকলিপি গ্রহণ করে করে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান।
এর আগে সোমবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বেলা সোয়া এগারটা পর্যন্ত রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের পাবলিক হেলথ এলাকায় আন্দোলনকারিদের বিক্ষোভে আটকা পড়ে গাড়িতেই অবস্থান করতে হয় পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ও তার সফরসঙ্গীদের।
এসময় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের গাড়িসহ বিভিন্ন বাহিনীর গাড়িও আটকে দিয়ে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। এসময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সকল বাঙালী সংগঠনের সমন্বয়ে আন্দোলনকারি পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতাকর্মীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের কার্যক্রমকে বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে বলেছেন, বহুল বিতর্কিত এই ভূমি কমিশনে বাঙ্গালীদের কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। যার ফলে এই কমিশনের কার্যত্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
এদিকে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতাকর্মীদের দুই ঘন্টা সড়ক অবরোধ কর্র্মসূচীতে আটকে থাকা অবস্থায়ই আন্দোলনকারিদের সাথে যোগাযোগ করেছেন পার্বত্য ভূমি কমিশন কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনকারিদের নেতা মোহাম্মদ সোলায়মান মাইকে এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, ভূমি কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে বৈঠকে বসার আহবান জানানো হয়েছে। ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো লিখিত আকারে চেয়েছেন। আমরা সেগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করবো।
অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে দাবিগুলো মানতে হবে জানিয়ে আন্দোলনকারিরা জানান, অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনটি সংশোধন করা নাহলে আগামীতে পাহাড়ের যে খানেই ভূমি কমিশন বৈঠকের আয়োজন করবে সেখানে তাৎক্ষনিক গণপ্রতিরোধ সৃষ্টি করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতাকর্মীরা।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













