২৫ অক্টোবর ২০২৫

পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ করছে ভূমিদস্যুরা

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

কখনও টিপটিপ আবার কখনও মূষলধারে বৃষ্টি। টানা বৃষ্টির কারণে কাটা পাহাড়গুলোর মাটি নরম হলেই ধসের আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন। ফলে পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় মাইকিং করা হলেও কোন পরিবর্তন নেই পাহাড়ে বসবাসকারীদের। উল্টো সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের উপহার দেয়ায় গেড়ে বসেছে অনেকেই।

অভিযোগ রয়েছে, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা সাব কমিটি গঠিত হয়েছে ২০১৯ সালে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ভূমিদস্যুরা। নগরীর ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত হাজারো পরিবারকে উচ্ছেদ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ তিন বছরেও সম্ভব হয়নি। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় কোন সহযোগীতা করা হচ্ছে না। ফলে অভিযান হচ্ছে ঢিমেতালে।

জানা গেছে, জেলা প্রশাসন মতিঝর্ণা ও বাটালী হিল সংলগ্ন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে পাহাড়ে অবৈধভাবে ব্যবহার করা বিদ্যুৎ সুযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও আবারও সংযোগ পেয়েছে। এসব অবৈধ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে মিটারও জব্দ করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে বিদ্যুৎ সংযোগ অবৈধভাবে লাগালেও মিটার স্থাপন করেছে পিডিবি’র অসাধু লোকজন। এদিকে, লালখান বাজার এলাকার জামেয়াতুল উলুম ইসলামীয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবৈধ দখলে থাকা পাহাড়ে রয়েছে দেড় শতাধিক পরিবার।

নগরীর ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো হল- আমবাগানে এ.কে.খান কোম্পানীর পাহাড়, বায়তুল আমান সোসাইটির হারুন খানের পাহাড়, কৈবল্যাধামস্থ বিশ্বকলোনীর পাহাড়, আকবরশাহ রেলওয়ে হাউজিং সেসাইটি ও কবরস্থানের পাহাড়, পরিবেশ অধিদফতর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের পাহাড়, পলেটেকনিক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়, ফয়সলেক সংলগ্ন মধুশাহের পাহাড়, এম আর সিদ্দিকের পাহাড়, ভেড়া ফকিরের পাহাড়, আমীন কলোনী সংলগ্ন ট্যাংকির পাহাড়, বায়জিদের মিয়ার পাহাড়, মুরাদপুরের ফরেস্ট্রীর পাহাড়, লেকসিটি আবাসিক এলাকার পাহাড়, ফয়সলেক আবাসিক এলাকার পাহাড়, ও পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনীর ১নং ঝিল সংলগ্ন পাহাড়।

আরও অভিযোগ রয়েছে, মাইকিং কিংবা অভিযান করে কোন লাভ হচ্ছে না। কারণ এদের স্থায়ী ভাবে পুনর্বাসন না করা গেলে এ ধরনের মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে না। এছাড়াও আকবরশাহ মাজারের পাশেই পাহাড় কেটে প্লট বানিয়ে ও কাঁচাঘর নির্মাণ করে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছে নুরুজ্জামান নামের আরেক ভূমিদস্যু।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন জায়গা নুরুজ্জামানের দখলে রয়েছে। সরকারী পরিত্যক্ত এক একর ২০ শতক জায়গা উদ্ধারের বিষয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। এদিকে এই পাহাড়ের পশ্চিম দিকের একটি অংশ কেটে ফেলার কারণে পূর্বদিকে থাকা পিডিবির খুলশী সাব-স্টেশন ঝঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। কেউ কেউ মাটির বস্তা দিয়ে আবাসগৃহ ঠেকানোর চেষ্টা করছে। টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়বাসীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যাওয়ার মাটি ধসের ঘটনা ঘটে কাটা পাহাড়গুলোতে। এক্ষেত্রে পাহাড়ের চূড়ায় গর্ত করে পাহাড় খেকোরা কৌশলে পাহাড় কাটার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর লালখান বাজার ও মতিঝর্ণা এলাকা থেকে প্রায় ৬’শর বেশি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে, আকবরশাহ হাউজিং সোসাইটি, নাছিরাঘোনা, সুন্দরীর পাহাড় মিলে প্রায় ২’শ পরিবার, টাইগার পাসের বাটালী হিল, একেখানের পাহাড়ে রয়েছে শতাধিক পরিবার, বায়েজিদের রৌফাবাদের মিয়ার পাহাড়ে রয়েছে প্রায় ৭৫ পরিবার, আকবরশাহ’র রেলের পাহাড়ে রয়েছে প্রায় অর্ধশত পরিবার। টাইগারপাস রেলের পাহাড় তথা বাটালী হিল, আকবরশাহর বেলতলী ঘোনা ও রেলের পাহাড় এবং মতিঝর্ণা এলাকায় থাকা রেলের পাহাড়ের পাদদেশে থাকারা অন্যত্র সরে যেতে নারাজ।

টাইগারপাস পুলিশ বক্সের উত্তর ও পূর্ব পাশে পাহাড়ের পাদদেশে এবং মাঝামাঝিতে গড়ে উঠা কাঁচা ঘর, তুলাতুলি ও ফয়স লেক এলাকার ১, ২ ও ৩ নং ঝিল এলাকায় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কাঁচা ও সেমি পাকা ঘর। এসব ঘরে বসবাস করছে শত শত পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এসব পরিবারের লোকজনকে কম ভাড়ায় থাকতে সহায়তা করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে থাকা ভূমিদস্যুরা। ফলে রেল প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযানে গেলেও তাদের বাধার মুখে বিভিন্ন সময় ফিরে আসতে হয়েছে।

লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকা ছাড়াও রেলের পূর্বাঞ্চলের খুলশী থানাধীন আকবর শাহ মাজার এলাকায় প্রায় সাড়ে দশ একর ভূমি অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই পাহাড়ি ভূমি। আকবর শাহ এলাকায় এসব পাহাড়ী ভূমি দখলে নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যানারে থাকা অসাধুরা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ভাড়া ঘর নির্মাণ করেছে। ফলে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা হত দরিদ্র শ্রেণীর উপর যে কোন মুহূর্তে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে পারে।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন