২৫ অক্টোবর ২০২৫

পিকআপ চাপায় নিহত ৬ ভাইয়ের পরিবারে ৩৫ লাখ টাকা সহায়তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ চাপায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬ ভাইয়ের পরিবারকে ৩৫ লাখ টাকা সহায়তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিহত ৬ ভাইয়ের পরিবারের জন্য মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) প্রধামমন্ত্রী এ ৩৫ লাখ টাকা অনুদান ঘোষণা করেছেন বলে জানিয়েছেন চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর। বুধবার (৬ এপ্রিল) চেক তৈরির সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন চেয়ারম্যান আদর।

চেয়ারম্যান আদর জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে অনুদান ঘোষণার পর চেক বুঝে নিতে তাকে ঢাকায় ডেকেছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। মঙ্গলবার রাতেই রওনা হয়ে তিনি এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। সকাল হতেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রয়েছেন। চেক তৈরির সকল ফরমালেটিজ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় এমপি ও প্রশাসনকে দিয়ে নাকি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ গিয়ে চেক হস্তান্তর করবেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে, আমাদের চাওয়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তারা এসে প্রধানমন্ত্রীর হয়ে অনুদানের চেক গলো হস্তান্তর করুক।

চেয়ারম্যান আরো জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে এক দুর্ঘটনায় ছয় ভাই নিহত হওয়ার ঘটনা সারাদেশে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। নিহতদের সন্তান ও স্ত্রীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর আমি (চেয়ারম্যান) আবেদন করেছিলাম। চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের সুপারিশে আবেদনটি আমলে নিয়ে নিহত ছয় ভাইয়ের পরিবারের জন্য ৩৫ লাখ টাকা অনুদান ঘোষণা দেন মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাবা সুরেশ চন্দ্র শীলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় অনুপম শীল (৪৬), নিরুপম শীল (৪০), দীপক শীল (৩৫), চম্পক শীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রক্তিম সুশীল মারা যান।

ঘটনার ১০ দিন আগে তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা ৯ ভাইবোন বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানকার একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে একসঙ্গে ৯ ভাইবোন (৭ ভাই ও ২ বোন) হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চারজনের মৃত্যু হয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই। ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্র শীলের মেয়ে মুন্নী শীল। আহত হন সুরেশ চন্দ্রের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে। নিহতদের বোন হীরা শীল মালুমঘাট খ্রিস্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে।

এদিকে, পাঁচ ভাইকে চাপা দেয়া পিকআপ ভ্যানের চালক সাহিদুল ইসলামকে ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করে র‌্যাব। তাকে আটকের পর র‌্যাব জানায়, ঘটনার দিন রাস্তায় বেশি কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দিতে বেপরোয়াভাবে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন। কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হতে অপেক্ষারতদের দূর থেকে লক্ষ্য করেননি তিনি। ফলে তাদের কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায় হৃদয় বিদারক এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে সুরেশের কর্মক্ষম ছয় ছেলের পরিবারের স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায়। বাকরুদ্ধ হয়ে যান নিহতের মা মানু বালা।

আরও পড়ুন