ইয়াসির রাফা »
ধীরে ধীরে সেই পুরোনো চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। মঙ্গলবার (২ জুন) সাধারণ ছুটি শেষে অফিস আদালত খোলার তৃতীয় দিন। একই সঙ্গে সীমিত আকারে চালু হয়েছে গণপরিবহন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় গত ২৬ মার্চ থেকে জরুরি সেবা বাদে সবকিছু বন্ধ ছিল। পরে ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে অফিস আদালত খুলে দেওয়া হয়। ১ জুন থেকে শুরু হয় গণপরিবহন চলাচল। এরপর থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চালু হয়েছে গণপরিবহন।
দুপুরে নগরীর ব্যস্ততম এলাকা আগ্রাবাদ মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সাধারণ ছুটির আগের মতোই ভিড়। ফুটপাতে লোকজনকে গায়ে গা লাগিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেকেই চলাচল করছেনা। বিশেষ করে জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেইট এলাকায় গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্বও মেনে চলা সম্ভব হয়নি। একই দৃশ্য ছিল নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজারে এলাকায়ও।
এদিকে রাস্তায় নিজস্ব সুরক্ষাসামগ্রীর মধ্যে মাস্ক পরেই চলাচল করতে দেখা গেছে অনেককে। আবার অনেকের তাও নেই। সন্তোষজনক দৃশ্য চোখে পড়েনি নগরীতে সীমিত আকারে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোতেও।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সিনিয়র ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বাবু বলেন, বর্তমান যে সময় এসে গেছে এখন আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকেই সতর্ক থাকতেই হবে। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত নিজ দায়িত্বে করতে হবে। প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে, যেন পরিবহণগুলোতে ঠিকমত জীবাণু নাশক স্প্রে ছিটানোর মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে এখন সবাই সুরক্ষা ও সতর্কতা না মানলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, প্রশাসনকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানার বিষয়টি তদারকি করতে হবে। প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে স্বাস্থ্যবিধি মনা হচ্ছে কিনা, চালক ও সহকারীসহ যাত্রীরা সঠিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলাচল করছে কিনা তা গুরুত্ব সহকারে তদারকি করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব না হলে বাইরে বেরিয়ে কীভাবে নিরাপদে থাকবেন? সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অর্থাৎ অন্যদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে খানিকটা দূরে থাকাতেই হবে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব বাংলাধারাকে বলেন, অনেকের এখন উপসর্গও দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ অনেকের শরীরে করোনাভাইরাস রয়েছে, কিন্তু তাঁরা জানেন না। কেউ জানেন না। এটিই সবচেয়ে ভয়ের বিষয়। কারণ, আপনার পাশ দিয়ে সুস্থ মানুষ হিসেবে যিনি হাঁটছেন, যার সাথে আড্ডা দিচ্ছেন; তিনিও এই ভাইরাসের নীরব বাহক হতে পারেন। তাই নিজেদের অজান্তেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে। এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। অর্থাৎ ঘরে থাকলেই আপনি নিরাপদ। আর ঘর থেকে বের হলেই সংক্রমণের ঝুঁকিতে। আমরা বারবার এ বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষকেই দেখা যাচ্ছে, তাঁরা কোন কিছুই মানছেন না। বিশেষ করে তরুণ ও মধ্য বয়সীরা ঘরে থাকছেন না। অকারণে বাইরে ঘুরছেন। তাই এই বয়সীদের করোনা সংক্রমণের হার বেশি। ঘরে না থাকলে এ ভাইরাসের সংক্রমণ আরো ভয়াবহ হতে পারে বলেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাংলাধারাকে বলেন, মানুষ অপ্রয়োজনে বাইরে বেশি ঘুরা-ফেরা করছেন। ঘরে থাকার জন্য আমরা বারবার অনুরোধ করছি। কিন্তু অনেকেই কথা শুনছেন না। অকারণে বাইরে বের হচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। আর বাইরে বের হলেই করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি। তাই সচেতন না হলে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা আরও বাড়বে।
জানা গেছে, নগরীর শেখ মুজিব সড়কে ২০ থেকে ৩০টি বাস চলাচল করছে দৈনিক। এর আগে প্রতিদিন এই রুটেই শতশত বাস চলাচল করতো। এদিকে সাধারণ মানুষ মনে করছে, গণপরিবহন চালু হলেও পরিবহনগুলোতে কতটুকু সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে৷
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













