১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

পুলিশের সাজানো ৬ মামলায় কারাভোগের পর জামিন পেলেন সাংবাদিক ফরিদ

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

টেকনাফ থানার সাবেক ওসি বহিস্কৃত প্রদীপ কুমার দাশের দায়ের করা ষড়যন্ত্রমুলক মামলায় কারাভোগের দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন পর জামিনে মুক্ত হলেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান।

বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন। তার স্ত্রী হাসিনা আকতার, বোন ফাতেমা আকতার বেবি, সালমা আকতার, মেয়ে সোমাইয়া মোস্তফা, ছেলে শাহেদ মোস্তফা, সাজেদুল মোস্তফাসহ স্বজনেরা কারাফটক থেকে ফরিদকে বরণ করে নেন। কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে টেকনাফ থানায় দায়েরকৃত এসটি ২৮১/২০২০, জিআর-৫৭৭/২০১৯ মামলার শুনানি শেষে পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত ফরিদকে জামিন দেন যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতের বিচারক মাহমুদুল হাসান।

কক্সবাজার জেলা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী, সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল মন্নান ও এডভোকেট রেজাউল করিম রেজা মামলার শুনানীতে অংশনেন। মামলাটির বাদি ছিলেন টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা আবুুুল কালাম আজাদ।

ঢাকার বাসা থেকে ধরে এনে সাজানো অস্ত্র, বিদেশি মদ ও ইয়াবার মামলা থেকে বুধবার (২৬ আগস্ট) জামিন দেন কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।

মেজর (অব.) সিনহার হত্যা মামলার আসামী টেকনাফের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সর্বশেষ তিনটি মামলায় তাকে আসামী বানিয়েছিলেন।

ফরিদুল মোস্তফা খানের আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল মন্নান বলেন, জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ফৌজদারী মিস মামলার মূলে জি.আর ১০২৫/২০১৯, (অবৈধ দুইটি অস্ত্র ও ৫ রাউন্ড গুলি) এবং জি.আর ১০২৬/২০১৯ (৪ হাজার পিচ ইয়াবা) পুলিশের সাজানো মামলা দুইটি শুনানী শেষে বুধবার সাংবাদিক ফরিদকে জামিন দেন বিজ্ঞ বিচারক। এই মামলা দুইটি ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দায়ের করেছিল পুলিশ। এর আগে গত ১ মার্চ জিআর ১০২৭/২০১৯ (বিদেশি মদ উদ্ধার) মামলায় জামিন প্রদান করেন একই আদালত।

তিনি আরো জানান, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপের দালাল মৌলভী মুফিজ ও জহিরের গায়েবি চাঁদাবাজির মামলা (টেকনাফ থানা মামলা নং-১১৫/২০১৯, ৩০ জুন ২০১৯) থেকে গত ১৩ আগস্ট জামিন দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রাজজ মোহাম্মদ ইসমাইল। এছাড়া ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থানায় দায়েরকৃত মামলা নং-৪২/২০১৯ (জিআর ৭৭৮/২০১৯) থেকে ১৯ আগস্ট জামিন দেন টেকনাফের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ। এ নিয়ে ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৬টি মামলারই জামিন হয়। এবং সমস্ত ডকুমেন্ট গুলো নিয়মমতো কারাগারে পাঠানো হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাংবাদিক ফরিদ মুক্তি পান।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের বাসা থেকে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ার বাড়িতে কথিত অভিযান চালানো হয়। ওই সময় গুলিসহ ২টি অস্ত্র, ৪ হাজার ইয়াবা ও বিপুল পরিমান বিদেশী মদের বোতল উদ্ধার দেখায় পুলিশ। কিন্তু এর অনেক আগেই ভিটে বাড়িটি বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। গত বছরের ৩০ জুন ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় চাঁদাবাজি মামলা হলে আত্মরক্ষায় ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তখন নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর গত বছরের ২৮ জুলাই পৃথক আবেদনও করেন।

সাংবাদিক ফরিদের পরিবারের দাবী, উক্ত আবেদনের তদন্ত না করে উল্টো টেকনাফ থানা ও কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম মিরপুর থানার পুলিশের সহায়তায় ‘ওয়ারেন্ট’ দেখিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে না পাঠিয়ে অমানবিক ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এর ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ১১ মাসের কারাবাস শেষে মুক্তি পেয়েছেন তিনি বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট)।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন