বিশেষ প্রতিবেদক »
রেল ভবন সংস্কার আর মেরামতের নামে প্রকৌশল বিভাগ কোটি কোটি টাকার টেন্ডার করছে। নামে বেনামে টেন্ডার করেই কার্যাদেশ দিয়ে ফাইল ক্লোজ করছে। বাৎসরিক বাজেট বরাদ্দ কোন না কোন ভাবে শেষ করছে। কিন্তু কাজের কাজ কোনটাই হচ্ছে না সরকারী অর্থ লুট করা ছাড়া।
সরকারী অর্থ লোপাটে নেমেছে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশল দপ্তরের আওতায় থাকা বিভাগীয় প্রকৌশলীদের দপ্তরগুলো। বৃষ্টি শুরু হলেই টিনের হাজারও ফুটো দিয়ে পানি ঢুকে চৌচির। এমন চিত্র অল্প বৃষ্টিতেই চোখে পড়বে রেলের পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলীতে থাকা প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে। অল্প বৃষ্টিতেই করুণ দশা এ আঙ্গিনায় থাকা বিভিন্ন বিভাগের।
দাপ্তরিক অভিযোগের লিখিত তথ্য থেকে জানা গেছে, বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তরসহ সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংস্থ (সিআরবি) প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে চিঠি লিখে ও তাগাদা পত্র দিয়েও কোন সুরাহা মিলছে না। ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে প্রধান প্রকৌশলী পূর্বকে। এমনকি এর অনুলিপি দেয়ার পরও পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক, বিভাগীয় প্রকৌশলী/২, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে মৃত্যুঝুঁকির আতঙ্কে প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সাব এসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার/কার্য্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি দীর্ঘ তিন বছরেও।
অভিযোগ রয়েছে, টিনের চাল ভেদ করে পানি পড়ার কারণে টেবিলের উপরে থাকা আর্ন্তজাতিক ও দেশীয় টেন্ডারের কোটি কোটি টাকার চুক্তিপত্রগুলো ভিজে তথ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার কৈফিয়ৎ দিতে হবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সেসব চুক্তিপত্র হিসাব নিরীক্ষা বিভাগকে প্রদর্শন করতে না পারলে এবং লেখায় কোন ধরনের অস্পষ্টা দেখা দিলে কফিয়ৎ তলব করবে নিরীক্ষকরা। এমনকি একাউন্টস জেনারেলের দফতর থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হতে পারে। এছাড়াও সন্দেভাজন হলে এসব ফাইল দস্তাবেজ নিয়ে টানা হেঁচড়া শুরু করবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে রেলের পূবাঞ্চলীয় প্রকৌশল বিভাগের চীফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সবুক্তগীন বাংলাধারা বাংলাধারাকে বলেন, প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরটির জরাজীর্ণ অবস্থা অল্প আগামী জুলাই মাস থেকে সংস্কার কাজ শুরু হবে। এ সংস্কার কাজের জন্য একটি টেন্ডারও হয়েছে।
মেরামত কাজ নিষ্পন্ন করতে কত টাকার টেন্ডার হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে না পারলেও বাংলাধারাকে নিশ্চিত করছেন সংস্কার কাজ জুলাই মাসেই শেষ হবে।
আরো অভিযোগ রয়েছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই টিনের চালের হাজারও ফুটো দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঢুকে মেঝে সয়লাব হয়ে যায়। অল্প সময়ে হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে সরকারী ক্রয় কর্মকান্ডের এ দপ্তরটির প্রতিটি কক্ষ। অনেকটা আকস্মিক ঝর্ণার মতোই টিনের জোড়া দিয়েও প্রবল বেগে পানি ঢুকতে থাকে। নিমিষেই পানিতে ভরপুর হয়ে যায় অফিস কক্ষের মেঝে। ভিজে যাচ্ছে আসবাবপত্র এমনকি কম্পিউটারসহ বিভিন্ন অফিস সরঞ্জাম। সেই সঙ্গে বৃষ্টির পানিতে ভিজছে কোটি কোটি টাকার চুক্তিপত্র। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এই দফতরটি সংস্কার বা মেরামতের জন্য সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংস্থ প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে তিন বছর আগ থেকে দফায় দফায় জানানো হলেও কোন সাড়া নেই।
২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ সালের ২৭ মে ও ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর এমনকি চলতি বছরেও মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে। ফলে সরকারী সম্পদ দেখার কেউ নেই এমন হতবাক উত্তরটাই ঘুরে ফিরে সচেতনদের মুখে মুখে।
রবিবার (২০ জুন) সকালে প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায়, প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ক্রয় শাখাগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘ প্রায় ৫/৭ বছর আগে অনিয়ম করেই সংস্কার করা টিনের চালের মাঝে হাজারো ফুটোয় এখন জরাজীর্ণ হয়ে আছে সরকারী পরিবহন সংস্থা রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরটি। মেঝেটা টাইলসে পরিপাটি হলেও সেমিপাকা কক্ষগুলোর টিনের চালটা নেহাৎ নু্যঁজ। এমন শৈলীতে গড়া চকচকে মেঝে যেন অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিতে সয়লাব। কাঠের আসবাব যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি কম্পিউটারসহ নানা অফিস সরঞ্জামও পানিতে ভিজে যাচ্ছে। টিনের চাল ভেদ করে বৃষ্টির পানি টেবিল-চেয়ারের উপর পড়ায় দফতরের কর্মকর্তারাও কাজ করতে পারছেন না। কেউ বালতি বসিয়ে রেখেছে টেবিলের উপর আবার কেউবা মেঝের পানি তুলছে বালতিতে। মেঝের পানিতে ফোম ভিজিয়ে পানি তোলার চেষ্টা যেন বিফলে না যায় তাতেও কাজ করছে আরেকজন সহকারী। এই দপ্তরের বিশাল আঙ্গিনায় পাঁচটি শাখা দপ্তরের সবগুলোই টিনসেডে গড়া। তবে শুধুমাত্র প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কক্ষটিই পাকা ও একতলা ভবন।
এ ব্যাপারে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের এক কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বাংলাধারাকে বলেন, দফায় দফায় চিঠি দিয়েও প্রকৌশল বিভাগকে পরিদর্শনে আনা যাচ্ছে না। জুন মাসের শুরুতে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঘটনাস্থল দেখাতে এনেও বিভাগীয় প্রকৌশলী/২ আহসান হাবিব দুরবস্থা না দেখেই চলে গেছেন। সংস্কার ও মেরামতের জন্য প্রকৌশল বিভাগকে চিঠি দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।
গত ৬ জুন বিভাগীয় প্রকৌশলী/২ আহসান হাবিব নিজে পরিদর্শন করতে এসে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দফতরে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে সময় কাটিয়ে চলে গেছেন প্রাণান্তর খোশগল্পে।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













