৩০ অক্টোবর ২০২৫

পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ!

তারেক মাহমুদ »

কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না পেঁয়াজের বাজার। বাজার নিয়ন্ত্রণে কোন পদক্ষেপ কাজে আসেনি। সরকার নানা অভিযান চালিয়ে  জেল-জরিমানা করার পরও দাম কমাতে পারেনি। দাম তো কোনভাবে কমছেইনা উল্টো আরও বাড়ছে। পাড়া-মহল্লার বাজার ও মুদি দোকানগুলোতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আর মায়ানমারের পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের পেঁয়াজ এখন বিশ্ব রেকর্ড করেছে। কারণ, পৃথিবীর কোথাও ২০০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় এমন খবর কখনো শুনেননি তারা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির  এমন লাগামহীন দামে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। পেঁয়াজের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছেন এমন প্রশ্নও করেছেন সাধারণ মানুষ। সরকারের নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেলেও বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা। দেশের উত্তরাঞ্চলে হালি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

এদিকে, পেঁয়াজ রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এর জেরে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার পেঁয়াজের বাজারে আগুন লেগেছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ও নেপালের। এই তিন দেশে কোথাও দ্বিগুণ, কোথাও বা তিনগুণ বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। 

আড়তদাররা বলেছেন, বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সংকট রয়েছে। কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমদানি করা পেঁয়াজ সরবরাহে সমস্যা হয়েছে। আর সেই কারণেই এখন বাজারের এই পরিস্থিতি।

খাতুনগঞ্জের পাইকারী পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলাই কুমার পৌদ্দার বলেন, যে পেয়াঁজ আজ সকালে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে তা দুপুরের পর কেজি প্রতি ৩০/৪০ টাকা বেড়ে গেছে।

তিনি পেঁয়াজের বাড়তি দামের জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করে বলেন, মূল জায়গায় হস্তক্ষেপ না করে প্রশাসন আমাদের ধরে জেল জরিমানা করছে। এতে করে বাজারে প্রভাব পড়ছে। পেঁয়াজ আমাদানী সহজ করে দিলে এ সমস্যা হতো না। তবে সহসা পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভবনা নাই জানিয়ে তিনি বলেন নতুন দেশিয় পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভবনা নাই। এ জন্য আরো মাস দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে।

বিক্রেতারা বলেন, বেশি দামে কেনা বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণে পেঁয়াজ বিক্রিও কমে গেছে। আগে দিনে ২০ কেজির মতো বিক্রি হলেও এখন ৭ কেজি পেঁয়াজও বিক্রি হয় না।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সপ্তাহে যেসব বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা বিক্রি হয়, সেই বাজারগুলোতে এখন দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। আর ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি।


খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে তিন দফা। প্রথম দফায় কেজিতে ১০ টাকা এবং পরের দুই দফায় কেজিতে ২০ টাকা করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা।

ব্যবসায়ী জহির বলেন, পেঁয়াজের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে আমরাও বিস্মিত। বাণিজ্যমন্ত্রীর পর প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন- পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আমরা ধারণা করেছিলাম এবার হয়তো পেঁয়াজের দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে দেখছি উল্টো।

গত শনিবার বুলবুল আঘাত হানার একদিন আগে থেকে নতুন করে বাড়তে থাকে দাম। তার আগে খুচরায় পেঁয়াজের দাম ১১০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল।

জানা যায়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর থেকে গত সোমবার পর্যন্ত এই অনুমতি নেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানির অপেক্ষায় আছে ৬১ হাজার টন।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র জানায়, সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে মিশর থেকে। দেশটি থেকে ৫৮ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের ৫৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দর দিয়ে মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন