২৮ অক্টোবর ২০২৫

প্রতারক গিয়াসের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব প্রবাসী, ভুয়া দলিল দেখিয়ে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ

জিয়াউল হক ইমন »

চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী মো. জামাল উদ্দিন। দীর্ঘদিন ছিলেন প্রবাসে। তিল তিল করে জমানো টাকা দিয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জায়গা কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ফাঁদে পড়েন এক ভয়ঙ্কর প্রতারকের। ভুয়া দলিল দেখিয়ে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক। শুধু তাই নয়, মামলা করে বিনা দোষে জেলও খাটান প্রবাসূ জামাল উদ্দিনকে। ভেঙ্গে পড়ে বেশ কয়েকবার করতে চেয়েছিলেন আত্মহত্যাও।

ওই প্রতারকের নাম গিয়াস উদ্দিন। সে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়ম নগর এলাকার মৌলভী মাছুম বাড়ির মৃত হামিদ শরীফের ছেলে। তার রয়েছে একটি চক্র। যেখানে তার সঙ্গে রয়েছে একাধিক সদস্য। আর মূলহোতা তিনিই।

এদিকে, পুলিশ কমিশনারসহ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে প্রতিকার চেয়ে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন দীর্ঘ দিন থেকে। তবুও পাননি কোন আইনি প্রতিকার। উলটো শিকার হয়েছেন মামলা-হয়রানির।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নামে বেনামে জায়গার দলিল বানানোর অভিযোগ আছে এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধ । একটি ভিডিও ফুটেজে প্রতারক গিয়াসকে স্বাক্ষর করতে দেখা গেলেও বর্তমানে স্বাক্ষর করেনি। টাকা নেওয়ার কথাও সে অস্বীকার করছে।

সরেজমিনে ভুক্তভোগীর ক্রয় করা জায়গা দেখতে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, গিয়াস ভাই আমাদের এলাকায় আসতো। এসে বিভিন্ন সময় দোকানে বসে চা খেতো। জায়গাগুলো ২০১৮ সাল থেকে জামাল ভাইয়ে নিছিলো। তখন থেকে ওনার হয়ে কাজ করতেছি এখানে। আলমগীর, দিদার এবং প্রতারক গিয়াস নামে ওই ব্যক্তি জায়গাগুলো সআর্ভেয়ার দিয়ে জামাল ভাইকে বুঝাই দিছিল।

ভুক্তভোগী প্রবাসী জামাল বলেন, ‘আমি জেলে যাওয়ার পর সে আমার বাসায় যায়। আমার স্ত্রীকে বলে সে কাগজপত্র সব কোর্টে নিয়ে যায়নায়। সেজন্য তাকে জেলে পাঠাইছে। কাল-পরশু তাকে আমি বের করে আনব। আমাকে তার সমস্ত ডকুমেন্টস গুলা দেন। তখন আমার পরিবারের ওপর আসমান ভেঙ্গে মাথায় পড়ছে। তখন আমার স্ত্রী কাগজপত্র বের করে দিয়ে দিল। সেখানে তার ৩টা সই করা চেক ও স্ট্যাম্প ছিল।’

তিনি বলেন, ‘তার সাথে আমার সাথে চুক্তি ছিল কুম আমার হবে শ্রম তার হবে। বিনিময়ে সে ১৫ শতাংশ লাভ নিবে। এই বলে সমস্ত ডকুমেন্টস সহ ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নিয়ে গিয়ে আমাকে আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাচ্ছে।’

‘গিয়াসের মাধ্যমে ৫টা জায়গার জন্য ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। ২২ গন্ডা জায়গার জন্য আমি আড়াই মাস জেল খাটছি। এক ব্যাগ রক্ত বিক্রি করে আমি মামলার হাজিরা দিছিআজ আমি নিঃস্ব। আইনের কাছে আমি এর ন্যায় বিচার চাই।’—যোগ করেন ভুক্তভোগী জামাল।

প্রতারণার বিষয়ে জানতে একাধিকভার গিয়াসের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল করেও তার সারা মেলেনি।

তবে বিষয়টি অন্যায় হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘উনি প্রবাসী ছিলেন। সারাজীবন পরিশ্রম করে তার সৎভাবে কামানো টাকা দিয়ে পরবর্তী জীবনের জন্য হয়তো একটি জায়গা কেনার চেষ্টা করেছেন। এতগুলো টাকা যদি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে এ লোকটা তো বেঁচে থেকেও মৃত।’

তিনি বলেন, ‘উনি টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যে জমির দলিল তাকে দেয়া হয়েছে এ দলিল সম্পূর্ণ জাল এবং ভুয়া। প্রতারিত যদি তিনি হয়ে থাকে এবং দলিল যদি জাল হয়ে থাকে তাহলে উনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন জাল-জালিয়াতির বিরুদ্ধে। এর সাথে যারা যারা জড়িত তাদের সবার বিরুদ্ধে উনি অভিযোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে উনি আইনগত অধিকার পাবেন।’

অভিযোগ পেলে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এম এ ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘প্রতারণা নিয়ে আমরা বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, চট্টগ্রামে বিশেষ করে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণামূলক কাজ হয়ে আসছে। আপনারা দেখেছেন সম্প্রতি আমরা বেশ কয়েকজন বড় প্রতারককে ধরেছি। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময় অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যারা বড় বড় প্রতারক তাদেরকে গ্রেফতারের আওতায় আনার জন্য। যদি আমাদের কাছে সেরকম তথ্য প্রমাণ নিয়ে আসে। তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। সাধারণ মানুষদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন এ প্রতারকদের পাল্লায় না পড়ে।’

বাংলাধারা/আরএইচআর

আরও পড়ুন