২৫ অক্টোবর ২০২৫

‘প্রভাবশালীদের দাপটে’ স্লুইসগেট বন্ধ, অনিশ্চয়তায় ১০ হাজার কৃষক

খালেদ মনছুর, আনোয়ারা »

আনোয়ারা উপজেলার স্লুইস গেট নির্মিত চারটি খালে প্রভাবশালীদের মাছ চাষের লালসায় পথে বসছে ১০ হাজার কৃষক। প্রায় সাড়ে সাত হাজার একর জমিতে চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে। মাছ চাষের জন্য প্রভাবশালীরা বন্ধ রাখছে স্লুইস গেটের পাটাতন। আবার কোনোটিতে জাল বসানোর জন্য একটানা খোলা রাখছে পাটাতন। ফলে ইছামতি ও কোদালা খালে স্লুইস গেটের পাটাতন বন্ধ রাখায় পরৈকোড়া, খাসখামা, মাহাতা, ভিংরোল, পাঠানীকোটা, বিলপুর, হাইলধর, বারখাইন, তৈলারদ্বীপ, বরুমচড়া, বটতলী গ্রামের প্রায় সাড়ে সাত হাজার একর জমিতে চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের করোনাকালীন চাষাবাদ বন্ধ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে অন্য জেলা থেকে শ্রমিক এনে চাষাবাদ চালু রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করার কড়া নির্দেশ দিলেও সেখানে আনোয়ারা উপজেলায় গুটিকয়েক প্রভাবশালীর অতিলোভের শিকার হয়ে বিপুল পরিমাণ কৃষি জমিতে চাষাবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে আনোয়ারার ইছামতি, কোদালা মহতর পাড়া ও কান্দরিয়া খালের পানির উপর নির্ভরশীল প্রায় সাড়ে সাত হাজার একর জমিতে পানির অভাবে চাষাবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় স্থানীয় কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেন। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির লোকজন নিয়ে খালগুলো পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি অফিসার রমজান আলী।

আনোয়ারায় বন্ধ স্লুইস গেটের স্থান পরিদর্শন করেন কৃষি, বিএডিসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কর্মকর্তারা

এসময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হামিদুর ও মফিজ নামে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি ইছামতি ও কান্দরিয়া খালে মাছ চাষের জন্য পানি উঠানামা করতে বাধা প্রদান করেন। এজন্য মাসের পর মাস স্লুইস গেটের পাটাতনগুলো বন্ধ থাকায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার একর জমিতে পানির অভাবে চাষাবাদ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার রমজান আলী পানি উন্নয়ন বোর্ডের মিজানুল হক বিএডিসির প্রতিনিধি আজমানুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে কোদালা খালের স্লুইস গেটের পাটাতনগুলো খুলে দিয়ে দুইজনকে দেখাশুনার দায়িত্ব প্রদান করেন।

বিলপুর এলাকার কৃষক মো. তৌহিদ বলেন, ‘খালগুলো দিয়ে পানি উঠানামা বন্ধ থাকায় আমাদের কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতে পারছিনা। তাই আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি অফিসারের নিকট অভিযোগ করি।’

পানি উন্নয় বোর্ডের উপ সহকারি কর্মকর্তা মিজানুল হক বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোন পেয়ে আমারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। দুটি খালের গেট খুলে দিয়ে দুইজনকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছি। মহতর পাড়া খালের গেটও খুলে দেয়া হবে।’

উপজেলা কৃষি অফিসার রমজান আলী বলেন, ‘এই চারটি খালের উপর উপজেলার বেশিরভাগ কৃষি জমির চাষাবাদ নির্ভরশীল। খালগুলোতে মাছ চাষের জন্য কিছু ব্যক্তি পানি উঠানামায় বাধা দেন বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। আমরা আজকে সরেজমিনে পরিদর্শন করলাম। এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুটি খালের গেট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুইজনকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক দায়িত্ব দেয়া হয়। যেসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলব। তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন, ‘গত বছর আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গেটগুলো খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করি। আজকে আমি মিটিংয়ে থাকায় উপজেলা কৃষি অফিসার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনকে পাঠিয়েছি। গেট বন্ধ রাখার বিষয়ে যাদের নাম আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো অবস্থাতেই কৃষিকাজ বন্ধ করা যাবে না।’

আরও পড়ুন