শহরের কোলাহল পেরিয়ে চট্টগ্রামের দক্ষিণে পা বাড়ালেই আনোয়ারা উপকূলের ফুলতলী সাগরপাড়। প্রচথম দেখাতেই মনে হতে পারে, এ বুঝি কক্সবাজার! অথচ এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বুকে গড়ে ওঠা এক অনবদ্য স্বপ্নের ঠিকানা, যেখানে প্রকৃতি আপন খেয়ালে সাজিয়েছে ঢেউ, বাতাস আর নীলাকাশের রঙে।
ফুলতলী সাগরপাড় নামটা এখনো হয়তো অনেকের কাছে অচেনা, কিন্তু যারা একবার এখানে এসেছেন, তাদের কাছে এটি শুধুই একটি জায়গা নয়, বরং হয়ে উঠেছে মনের প্রশান্তি খোঁজার এক নির্জন আশ্রয়। সাগরের ঢেউ যখন গর্জে ওঠে, তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন কোনো না বলা কবিতা আবৃত্তি করছে। হাওয়ার প্রতিটি ঝাপটা আর সূর্য আলোতে চিকচিক করা পানির ঢেউ, সব মিলিয়ে এক অনির্বচনীয় মুগ্ধতা।
এই পথে যাওয়ার পথটাও কম মুগ্ধতার নয়। ঝারুল গাছের সারি, দুপাশে সবুজের ঘন ছায়া আর মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া পিচঢালা রাস্তা,প্রকৃতি যেন নিজ হাতে এঁকে দিয়েছে এই পথচিত্র। মোটর সাইকেল দিয়ে এই পথ পাড়ি দিতে গায়ে এসে লাগে এক ঝলক নির্মল বাতাস। মনে হয়, আমি আর প্রকৃতি যেন একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।
ছুটির দিন কিংবা সাপ্তাহিক অবসরে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে এ উপকূলীয় অঞ্চল। কেউ সমুদ্রের পানি মাড়িয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন বালিতে প্রিয়জনের হাত ধরে, কেউ আবার বসে আড্ডা জমাচ্ছেন সাগরের পাড়ে থাকা কংক্রিটের ব্লকের উপর। আবার কেউ, একেবারে একাকী দাঁড়িয়ে নির্ভার হয়ে সমুদ্রকে বলছেন মনের না বলা কথা।
ফুলতলীর এই সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে কথা হয় পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তুহিনের সঙ্গে। গায়ে একরাশ প্রশান্তি মেখে বললেন, “পরীক্ষার মধ্যেও কিছু সময় বের করে এখানে এলাম। মাথাটা অনেক হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে, এখন বাকি পরীক্ষাগুলো আরও ভালো যাবে। এখানে এলেই কক্সবাজারের মতো অনুভূতি হয়, প্রকৃতির এতটা কাছে যেন আর কখনো ছিলাম না!”
তবে ফুলতলী সাগরপাড়ের এই সৌন্দর্যের মাঝেও আছে কিছু অপ্রিয় বাস্তবতা। দোকানপাটে অতিরিক্ত খাবারের দাম, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব এই জায়গাটির সম্ভাবনাকে কিছুটা হলেও থমকে দিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের একটু নজরদারি আর পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে পারলে, এই স্থান হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র।
শেষ বিকেলের রক্তিম আলোয় যখন ঢেউগুলো সোনালি রঙ মেখে ফিরে আসে, তখন মনে হয়, এই জায়গার নাম যদি ‘এক টুকরো কক্সবাজার’ হয়, তাতে কোনো ভুল নেই। প্রকৃতি যেন এখানে এসে একটু বেশি খুশি হয়, আর আমরাও তার গাঢ় ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ফিরি জীবনের দুঃসহ বাস্তবতায়।