মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
ফেসবুকে ট্রেনের টিকেট নিয়ে কালোবাজারিরা সক্রিয়। অবৈধ বিক্রি ঠেকাতে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই। ফলে প্রতারণা হচ্ছে ক্রেতা সাধারণ। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম স্টেশনসহ ৫টি জংশন স্টেশন থেকে ঈদ যাত্রা শুরু হয়েছে। অগ্রিম টিকেট বিক্রির গন্তব্যে যাত্রা শুরু হয়েছে ৫ জুলাই থেকে। একইদিন অগ্রিম টিকেট বিক্রিও শেষ হয়েছে। অগ্রিম টিকেট বিক্রির শেষ যাত্রা আগামী ৯ জুলাই (শনিবার)। আগামী ১০ জুলাই রোববার পবিত্র ঈদুল আযহার দিনে কোন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।
অভিযোগ রয়েছে, ঈদ যাত্রার কোন ধরনের অগ্রিম টিকেট ফেরতের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে যাত্রা বাতিলের জন্য স্টেশনে ধর্ণা না দিয়ে যাত্রীরা ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে টিকেট বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি ফেসবুকে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করছে টিকেট বিক্রির বিষয়টি।
আইসিটিতে সরকারের নজরদারি না থাকায় টিকেট কালোবাজারিরা স্যোশাল মিডিয়ায় এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে কলঙ্কিত হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ— এমটিই জানালেন পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম থেকে এবারও তিনটি রুটে ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন সপ্তাহিক বন্ধ ছাড়াই চলাচল করছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে ৫টি আন্তঃনগর ট্রেন। আর সিলেটের দিকে যাবে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস। শুধুমাত্র মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন চাঁদপুরের উদ্দেশে যাবে। ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছে বিজয় এক্সপ্রেস। চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩ হাজার টিকেট বিক্রি করা হয়েছে। এরমধ্যে মোবাইলে ও স্টেশন থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ৫ দিনে আসনসহ টিকিট বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ২৫৮টি, মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০১টি, মহানগর গোধুলী এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৫৫টি, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ও তূর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৮৪৫টি। সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৬৪৮টি, উদয়ন এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ৬৬২টি। তবে চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৪০টি। তিনটি রুটে পাঁচদিনে আসনসহ সর্বমোট টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩৭ হাজার ৯টি। চোরাকারবারিদের রোধ করতে র্যাব, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশ সার্বক্ষণিক বুথ লাগিয়ে পাহারা দিলেও কালোবাজারি দমাতে পারেনি।
ঢাকা স্টেশন কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত সহজ ডট কম অ্যাপ, মোবাইলে ও স্টেশনের কাউন্টারে ৫ দিনব্যাপী ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে। এ কার্যক্রমে ঢাকা ও বিমান বন্দর স্টেশন থেকে ২৯টি আন্তঃনগর ট্রেনের আসনসহ টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শেষ হয়েছে গত ৫জুলাই। সে অনুযায়ী চট্টগ্রামগামী সুবর্ণা এক্সপ্রেসের আসনসহ ৬ হাজার ২৫৮টি টিকিট, মহানগর প্রভাতীর ৬ হাজার ৫৫টি, মহানগর গোধুলীর ৪ হাজার ৫৩৬টি, তূণা নিশিতা এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ৮৪৫টি।
এদিকে, পঞ্চগড় গামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের সাড়ে ৬ হাজার, সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৪৯৩টি, উপবন এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৪৪০টি, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৭৯৪টি টিকিট বিক্রি হবে। উত্তরবঙ্গের দিকে, বাহাদুরাবাদ ঘাটের তিস্তা এক্সপ্রেসের ৬ হাজার ৭২০টি ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ১২৪টি। তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ২৬৩টি ও যমুনা এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ২৬৩টি, কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্ধুর প্রভাতীর ৪ হাজার ২৬৩টি, এগার সিন্ধুর গোধুলীর ৪ হাজার ২৬৩, খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ২৫৭টি, চিত্রা এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ৪১০টি টিকেট বিক্রি হয়েছে। নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ২০৮টি, দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেসের ৩ হাজর ৪৯৩টি, নীলফামারীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের ৪ হাজার ২৯৮টি, দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৯৩৪টি, লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেসের ৩ হাজার ৮০টি, রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ৫৮৬টি ও পদ্মা এক্সপ্রেসের ৫ হাজার ৪১১টি আসনসহ টিকিট বিক্রি হয়েছে।
তবে ঈদ উপলক্ষে মোবাইলে ও ঢাকা স্টেশনের কাউন্টার থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। মোবাইলে ৫ দিনের অগ্রিম টিকিট বাবদ ১ লাখ ৩ হাজার ১৯৪টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। একইভাবে এসব ট্রেনে ঢাকামুখী টিকিট বিক্রি হয়েছে আরও ১ লাখ ৩ হাজার ১৯৪টি। এছাড়াও ঈদের আগের দিন ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে ৫ হাজার। বরাবরের মত এবারও কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩০ হাজার স্ট্যান্ডিং টিকিট যাত্রীদের সুবিধার্থে বিক্রি করবে।
সিলেট স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে মোবাইলে ৫০ ভাগ অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হয়েছে। সিলেট থেকে ঢাকাগামী তিনটি ও চট্টগ্রামগামী দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ জুলাই শেষ হয়েছে। সে অনুযায়ী ৫ দিনের অগ্রিম টিকিট হিসেবে ঢাকাগামী পারাবাত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে ৮৪০টি, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৪০টি, উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৪০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৪০টি ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৪০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। ৫ দিনে সর্বমোট টিকিট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২শ’টি।
রেলের একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে রেল কর্মচারীদের অর্থাৎ যাদের আন্তঃনগর ট্রেনে পাশের মাধ্যমে চলাচলের সুবিধা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ৫ দিনে ঢাকাগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনে ৫০টি, মহানগর গোধুলী ট্রেনে ৭১টি সিটের বিপরীতে পাস অনুমোদন করা হয়েছে। সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে ৮৯টি, উদয়ন এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রেও ৮৯টি সিটের বিপরীতে পাস অনুমোদন করা হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৮৮টি সিটের বিপরীতে পাস অনুমোদন করা হয়েছে।