বিশেষ প্রতিবেদক »
চট্টগ্রামের ফয়’স লেক প্রকৃতির ছোঁয়া হারাচ্ছে কৃত্রিমতার কারণে। প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে এসে পর্যটকরা এখন ক্ষুব্দ ও দুঃখ প্রকাশ করছে। কিন্তু ব্যবসার কারণে পর্যটকের ক্ষুব্দ মন্তব্যকে মাড়িয়ে দিয়ে অতি লোভে পড়ে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রেলের লিজ প্রদান প্রক্রিয়াকেও বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাচ্ছে।
২০১৯ সালে অবৈধ স্থাপনা ও খাজনাসহ বিভিন্ন খরচ পরিশোধ না করার কারণে লিজচুক্তি বাতিল হলেও আবারো চুক্তি হচ্ছে অল্প কিছুদিনের মধ্যে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে ফয়স’ লেককে বেসরকারী খাতে লিজ দেয়ায় প্রকৃতির ছোঁয়া হারাচ্ছে এই আঙ্গিনা। আবার এই লেকে চিরসুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হারিয়েছে দর্শনার্থীরা। কারণ দর্শনার্থীদের অর্থ ক্ষমতার মধ্যে নেই চক্ষু মেলিয়া লেক দেখার প্রবেশাধিকার। অভিযোগ রয়েছে, জনপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত নেয়ার রেকর্ড রয়েছে কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, ৩৩৬ দশমিক ৬২ একর পাহাড়ী ভূমি ২০০৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ৫০ বছরের জন্য কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক রেল ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে লীজ নেয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড প্রথম বছর ১০ লক্ষ টাকা, ২য় বছর ১৫ লক্ষ টাকা এরপর থেকে প্রতি বছর ২৫ লক্ষ টাকা রেলওয়ে ও পর্যটন কর্পোরেশনকে ২ অনুপাত ১ হিসেবে লীজ মানি পরিশোধের কথা ছিল। আবার চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী কনকর্ড প্রতিবছরে মোট আয়ের শতকরা তিন ভাগ রেলওয়ে ও পর্যটন কর্পোরেশনকে পরিশোধ করার শর্তে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি সম্পাদিত হয়।
এর আগে ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই রেলওয়ে ও পর্যটন কর্পোরেশনের মধ্যে একটি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হয়। এতে পর্যটন কর্পোরেশন প্রতি বছর রেলওয়েকে ইজারার মূল্য বাবদ ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা পরিশোধের শর্ত ছিল। পর্যটন কর্পোরেশন ও কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর মধ্যে বিল্ট অপারেট এবং ট্রান্সফার (বিওটি) ভিত্তিতে কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ২০০৪ সালের ১০ মার্চ একটি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ত্রি-পাক্ষিক চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় ২০১৯ সালেই রেল এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে এর লিজ বাতিল করে দিয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা।
কিন্তু রেল ও পরিবেশের অনুমতি না নিয়ে পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় রেল কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানের লীজ বাতিল করে দিয়েছে। কৃত্রিম ও অবৈধ স্থাপনা টিকিয়ে রাখতে উচ্চ আদালতে রীট মামলা করায় আদালত রেলের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ফলে উচ্ছেদ অভিযানও করা যাবে না যতদিন স্থগিতাদেশ খারিজ না হয়।
আরও অভিযোগ রয়েছে, কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক রেলকে নীট আয়ের মাত্র তিন শতাংশ মুনাফা প্রদান করে। তবে এরমধ্যে নানা কারচুপির অভিযোগ রয়েছে হিসেবের খাতা নিয়ে। এছাড়াও পাহাড়কেটে বিভিন্ন স্থাপনা যেমন নির্মাণ করেছে কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক তেমনি কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্কের আওতায় থাকা ফয়’স লেকের প্রবেশ পথে বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও কফি হাউসকে ভাড়া দিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের অসামাজিক কাজে সহায়তা করছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী। এদিকে এই হোটেলগুলোতে বিভিন্ন সময়ে অভিযানের নামে মাসোয়ারা আদায় করছে আকবরশাহ ও খুলশী থানা পুলিশ।
এ ব্যাপারে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার মন্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি বদলী হয়ে যাওয়ায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উভয় মন্ত্রনালয় থেকে মৌখিকভাবে জানা গেছে রিট বাতিল হয়েছে। তবে কাগজপত্র দফতরে আসেনি। খাজনাসহ অন্যান্য খরচ কনকর্ড পরিশোধের শর্তে পুনরায় লিজ চুক্তি হবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে। শুধু তাই নয় গত তিন বছরের দেনা পাওনাও বুঝিয়ে দিবে কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক কর্তৃপক্ষ।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













