বাংলাধারা প্রতিবেদন >
মানুষের জীবনে বন্ধুর গুরুত্ব অনেক। তাই বন্ধুত্ব কথাটি ছোট হলেও এর বিশালতা অনেক। সারা জীবনে মানুষ চায় একটি ভালো বন্ধু। আর ভালো বন্ধু হওয়ার তালিকাতে আপনি বইকে রাখতে পারেন সবার ওপরে। একটি বই যেমন আপনাকে অনেক কিছু শেখায় তেমনি ভালো খারাপ সম্পর্কে জানায় আবার কখনও হাসি কান্নায় ভরিয়ে তুলে আপনার জীবন। বই পড়ে আপনি যেমন নানা জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন তেমনি পুরো পৃথিবী সম্পর্কে জানতে পারবেন এ বই থেকেই।
প্রযুক্তির আধুনিকায়ন হলেও বইয়ের আবেদন যেন সবসময় থাকবে সেটা আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
এদিকে ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে বইমেলা। কয়দিন পরই আকাশে বাতাসে মিলবে নতুন বইয়ের গন্ধ। বইপ্রেমীরা নতুন, পুরোনো দেশি-বিদেশি বই কিনতে ভিড় করবেন বইমেলায়। কিন্তু বই কিনে জমিয়ে রাখলেই হবে?
মূল্যবান বইটিকে অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করতে হলে নিতে হবে বইয়ের সঠিক যত্ন। অনেক কারণেই বই এর ক্ষতি হতে পারে। পোকায় কাটতে পারে, আর্দ্রতা ক্ষতি করতে পারে, ধুলাবালিতে ক্ষতি হতে পারে। পড়ার সময় ঠিকভাবে যত্নবান না হলে ছিড়ে যেতে পারে, অযত্নে রাখলে সেই বইটি হারিয়েও যেতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বইয়ের সঠিক যত্ন নেওয়ার কয়েকটি উপায়:
১. বইয়ের যত্নের জন্য প্রথমেই দরকার ভালো একটি শেল্ফ বা বইয়ের তাক। যা সহজেই পরিষ্কার করা যায়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি শেল্ফে কাঁচের দরজা থাকে। এমনটা হলে ধুলোবালি কম পড়ে, আবার বইগুলো বাইরে থেকে দেখাও যায়। কাঁচের শেলফ না থাকলেও, বই কিন্তু কখনোই দরজা বা জানালার গা ঘেঁষে রাখবেন না। এতে রোদ বা বৃষ্টির ছিটে এসে সহজে নষ্ট করে দিতে পারে আপনার সখের বইগুলিকে।
২. বইয়ের যত্ন না নিলে পোকায় কাটে, এতে ধুলো জমে, বই দুর্গন্ধ হয় কিংবা ছিঁড়ে যায়। ধীরে ধীরে প্রিয় বইয়ের এই অবস্থা যাতে না হয়, সেজন্য মাঝে মাঝে বইগুলোকে শেল্ফ থেকে নামিয়ে আস্তে আস্তে সেগুলো শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। তারপর কিছুক্ষণ রোদে রাখার পর আবারো যত্ন করে তুলে রাখুন বইয়ের তাকে।
৩. বই জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে, দৃষ্টিকেও করে প্রসারিত। তাই শৈশব থেকে শিশুদের যেমন বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যাস করা দরকার, তেমনি বইয়ের যত্নও শেখানো উচিত তাদের। এর জন্য বইয়ের ভেতরে নিমপাতা এবং শেলফের প্রত্যেকটি তাকে একটি বা দুইটি করে ন্যাপথলিন বল রেখে দিন। এছাড়া শুকনো ল্যাভেন্ডার ফুল দিয়ে ছোট ছোট পুঁটলি বানিয়ে শেলফের কোণায় রাখতে পারেন। এটা পোকা থেকে দূরে রাখবে।
৪. গাদাগাদি করে বই না রেখে, বিষয় অনুযায়ী বইয়ে লেবেল লাগিয়ে গুছিয়ে রাখুন। তাছাড়া সব বই যে একদিনেই মুছতে বা পরিষ্কার করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই৷ সময় কম থাকলে একেকদিন একেক বিষয়ের বইগুলো পরিষ্কার করুন, যত্ন নিন। এতে বই খুঁজে পাওয়া এবং পরিষ্কার করে বই গুছিয়ে রাখা অনেক সহজ হয়ে যাবে। তাছাড়া বইপ্রেমী বন্ধুদের উপহার খুঁজতেও গোছানো বুক শেলফ সাহায্য করবে আপনাকে।
৫. তুলনামূলকভাবে বেশি পুরনো বইয়ে কিন্তু পোঁকামাকড় ও দুর্গন্ধ বেশি হয়। এ সব এড়াতে কেউ কেউ বইয়ের ভেতর রাসায়নিক পাউডার দিয়ে রাখেন, যা একেবারেই উচিত নয়। কারণ বইয়ে থাকা পাউডার থেকে বই পড়ার সময় শরীরের ক্ষতি হতে পারে। আসলে বই নিয়মিত ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করে রাখলে বইয়ের মধ্যে রাসায়নিক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন হয় না।
৬. পড়ার আগে বইয়ে মলাট লাগিয়ে নিলে বইয়ের ওপরটা অনেকদিন পর্যন্ত নতুন থাকে। আর যদি পড়ার সময় প্রিয় বইটির চেহারা দেখতে চান, তাহলে ট্রান্সপারেন্ট পেপারের মলাট লাগিয়ে নিন। তাহলেই আর কোনো অসুবিধা থাকবে না। তবে হ্যাঁ, পড়ার সময় বা পরিষ্কার করার সময় বই কিন্তু কখনো ভেজা বা নোংরা হাত দিয়ে ধরবেন না।
৭. অনেকেই বই পড়ে পৃষ্ঠা ভাঁজ করে রেখে দেয় পরে পড়ার জন্য। এতে বইয়ের ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই পৃষ্ঠা মনে রাখার ক্ষেত্রে বুক মার্কার ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কার্ড, আলাদা রঙিন কাগজ, রঙিন ফিতা ইত্যাদি হাতের কাছে থাকা অল্প কিছু জিনিস দিয়েই তৈরি করে নিতে পারেন বুক মার্কার।
বইপ্রেমীদের মনের পিপাসা মেটাতে বিশ্বের সব বই কিনে পড়া সম্ভব নয়। তাই একে অপরের কাছ থেকে নিয়েও আমরা পড়ে থাকি। তবে এক্ষেত্রে অনেকে বই পড়তে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে, অযত্নে রেখে নষ্ট করে। তাই কাউকে বই দেওয়ার আগে বলে দেওয়া উচিত, আপনার দেওয়া বইটি যাতে ভালো থাকে, তবে বন্ধুত্বও টিকে থাকবে। আসুন, সকলেই বইয়ের যত্ন নিই, অন্যদের যত্ন নিতে উদ্বুদ্ধ করি।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













