২৬ অক্টোবর ২০২৫

বঙ্গবন্ধুর আদরের ছাত্রনেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী

তারেক মাহমুদ ভূঁইয়া »

কিংবদন্তীর মহানায়ক এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ইতিহাসের অনড় স্তম্ভ। সৌভাগ্যবান এই নেতা বঙ্গবন্ধুর খুবই কাছের আর আদরের ছাত্রনেতা ছিলেন। গুণী এই রাজনৈতিক ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর সাহচার্য পেয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু যখন চট্টগ্রামে আসতেন ট্রেন থেকে নেমে প্রথমে জিজ্ঞেস করতেন, ‘আমার মহিউদ্দিন কই? মহিউদ্দিন চৌধুরীও বঙ্গবন্ধুকে অন্তর থেকে ভালোবাসতেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাজের মাধ্যমে তা বারবার প্রমান দিতেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে প্রবল ক্ষমতাশালী হয়েও ক্ষমতার মোহ স্পর্শ করেনি তাকে।

কিছুদিন না যেতেই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে শহীদ হন বঙ্গবন্ধু। অল্পের জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরী ধরা পড়া থেকে বেঁচে যান, মৃত্যুবরণ করেন সাথী মৌলভি সৈয়দ। পালিয়ে গিয়ে ভারতে প্রতিবিপ্লবীদের সাথে যোগ দেন। লক্ষ্য সামরিক জান্তা, খুনি মোশতাককে সামরিকভাবে পরাস্থ করা।

কিছুদিন পরেই দলের নির্দেশে পন্থা পরিবর্তন করে আবার সক্রিয় হন প্রকাশ্য রাজনীতিতে। দেশে এসেই নির্যাতন ও একের পর এক কারাভোগের শিকার হন এ নেতা। তার আগে এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাকশাল করলেন, তখন শ্রমিক নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফ্রন্টের সদস্য করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকান্ডের কাল রাতে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে ঢাকার কমলাপুরের একটি হোটেলে অবস্থান করেছিলেন। আকস্মিক ট্র্যাজেডিতে বিধ্বস্ত মহিউদ্দিন দ্রুত চট্টগ্রাম ফিরে এসে আওয়ামী লীগের বিপর্যস্ত নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করেছিলেন।

পঁচাত্তরের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে যান মহিউদ্দিন। সামরিক আইনে গ্রেপ্তারের প্রায় ছয় মাস পর রাজশাহী কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। ততদিনে তার রাজনৈতিক সহচরদের অনেকেই চলে গেছেন ভারতে। মুক্তি পেয়ে মহিউদ্দিনও যান সেখানে। এই বিপর্যস্ত সময়ে ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে নিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।

পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে একদিন তিনি ছদ্মবেশে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে গিয়েছিলেন। মাজার বলতে কিছু ছিল না। বাঁশের সীমানাও ভালভাবে ছিল না। গোপালগঞ্জ তো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো ছিল। তিনি চট্টগ্রাম থেকে নির্মাণ শ্রমিক, ফরিদপুর থেকে ইট আর সিমেন্ট সংগ্রহ করে বঙ্গবন্ধুর কবর ঘিরে পাকা দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন।

দক্ষিণ কাট্টলী থেকে শ্বেতপাথরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ লিখে নিয়ে সেটা কবরে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালী জাতির সংগ্রামের ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা। এই বিজয়মেলার স্বপ্ন এগিয়ে নিতে মহিউদ্দিন চৌধুরী কয়েক দশক ধরে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগের প্রয়াত বর্ষীয়ান নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে এসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান গড়ে তুলেছিলেন। পাশাপাশি অর্জন করতে পেরেছিলেন চট্টলবাসীর অগাধ আস্থা। যখন একটা বিষয় তিনি উপলব্ধি করতেন যে এটা জনগনের কল্যাণের কাজ, তখন তিনি কাজটা হাতে তুলে নিতেন। কোন কাজ তাঁর দলের কেউ কেউ হয়তো পছন্দ করেনি, কিন্তু তিনি তার তোয়াক্কা করেননি। বৃহত্তর জনস্বার্থে তিনি কাজ করেছেন। তিনি সবসময় জনস্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। যুগে যুগে চট্টগ্রামের আপামর জনগণ তাঁকে স্বরনীয় করে রাখবেন।

লেখক: প্রধান প্রতিবেদক, বাংলাধারা ডটকম

আরও পড়ুন