২৪ অক্টোবর ২০২৫

বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় টিউবের খননও শেষ

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিনিধি»

বঙ্গবন্ধু টানেলের দক্ষিণ পাড় আনায়ারা। আনোয়ারার উন্নয়ন এখন স্বপ্ন বাস্তবায়নের মতোই। সেখানে উন্নয়নের ধারা যেন অর্শ্বের গতিতে ছুটে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চট্টগ্রামের উন্নয়নে মোট তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এ উন্নয়ন হলো কর্ণফুলী নদীর দক্ষিন পাড়ের এপ্রোচ সড়কের উন্নয়ন। দক্ষিন পাড়ের ৪ হাজার ৯৫২ মিটার এপ্রোচ সড়কের উন্নয়ন আশা জাগানো স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে। উন্নয়নের এই গতিধারায় এলাকাবাসির চোখে মুখে স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিক্ষা। তাই মহাখুশি এলাকার সাধারন মানুষ।

২০২২ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের(চউক) দুটি ও বাংলাদেশ ব্রিজ  অথোরেটি(বিবিএ)’র একটি প্রকল্প। সম্পূর্ণরুপে এগুলো বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের বিশেষ করে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা পর্যটন এলাকার পরিপূর্ণতা পাবে। টানেলে বোরিংয়ের আগে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার  ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার বা ১০৫৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন। কিন্তু পরে তা বৃদ্ধি করে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়েছে।

প্রথম টিউবের খনন কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের শেষের দিকে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় টিউবের খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, বঙ্গবন্ধু টানেলের এ পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ায় আগামী বছরের শেষের দিকে চালু হয়ে যাবে বঙ্গবন্ধু টানেল ও এপ্রোচ সড়ক এমন ধারণা প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুল তথ্য প্রকাশ করছে। শুক্রবার মূলত টানেলের দ্বিতীয় টিউবটির খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তা বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে যেতে পারে। টানেলে এখনও গাড়ী চলাচলের কোনো উপযোগী হয়নি।  

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ এর অ্যালাইনমেন্ট চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর খেকে  কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে। বঙ্গবন্ধু টানেলের দুটি টিউব চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে। টানেলের প্রবেশপথ হবে নেভি কলেজের কাছে, বহির্গমন পথ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানা সংলগ্ন ঘাট দিয়ে। প্রকল্প সাইটের উভয়দিকে বগুড়ার আরডিএ কর্তক চারটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে প্রকল্বের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য। এছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উভয়দিকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার পতেঙ্গা প্রান্তে ১৫ মেগাওয়াট স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার আনোয়ারা প্রান্তে বিদ্যুত সাবস্টেশন নির্মাণ করছে।

বাংলাদেশ সেতু বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, সেতু বিভাগের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ দেশের প্রথম  ও একামাত্র টানেল। এখন এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে এটি একটি মাইলফলক চিহ্নিত হচ্ছে। চায়না কমিউনিক্যাশন কন্সট্রাকশন কোম্পানী(সিসিসিসি) নামের একটি ঠিকাদারপ্রতিষ্ঠান এই টানেলের কাজ করছে। চীনা ও বালাদেশী মিলে প্রায় এক হাজার ২৫০ জন শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে। আবার সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে কনসালটেন্ট অফিস কক্ষে কাজ করছেন ৩৫ জন কর্মকর্তা -কর্মচারী। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করছে টানেল নির্মানের কাজ।  কনস্যালটেন্ট হিসেবে কাজ করছে এসএমইসি- সিওডবিøওআই।

বিবিএ’র ইস্টিমিটেড কস্ট এনালাইসিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ মানেই ‘মাল্টি-ল্যান্ড রোড টানেল আন্ডার দ্যা রিভার কর্ণফুলী’। এই টানেলে থাকছে দুটি টিউবের ন্যায় চারলেনের সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনা। উভয়দিকে টানেলের মুখ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ হবে। স্যাটব্যাক অনুযায়ী এই টানেলের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার  ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বা ১০৫৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন। এরমধ্যে সরকারী অর্থায়ন থেকে আসছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ২৩ লাখ ৭৮ হাজার বা ৩৫০ দশমিক শূণ্য তিন মিলিয়ন। কিন্তু পরে তা বৃদ্ধি করে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রজেক্ট এসিসট্যান্স থেকে বিনিয়োগ করা হচ্ছে ৫ হাজার ৬৪৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৭৫০ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন।  সেতু বিভাগের হিসেব অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুলেন বিশিষ্ট সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।

বঙ্গবন্ধু টানেলের সাইটে কর্মরত এক প্রকৌশলী বাংলাধারাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সংযোগ স্থাপন হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। আধুনিয়কায়ন হবে বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে। বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্রও। গড়ে উঠবে  চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ। যুক্ত করা হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে, তরান্বিত হবে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ। সুযোগ-সুবিধা, গতি পাবে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ। বৃদ্ধি পাবে চট্টগ্রাম বন্দরের গতিশীলতা। 

প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী দেখা গেছে, ৪ লেন বিশিষ্ট এপ্রোচ সড়কের মধ্যে রয়েছে পতেঙ্গা অংশে ৫৫০ মিটার আর আনোয়ারা অংশে ৪ হাজার ৯৫২ মিটার। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭ মিটার। টানেলের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের বাহিরে পতেঙ্গা এলাকায় কাটা হবে ২০০ মিটার আর আনোয়ারায় কাটা হবে ১৯০ মিটার। কার্যপরিধি ২৫ মিটার। আনোয়ারা অংশে ফ্লাই-ওভারের দৈর্ঘ্য ৬৩৭ মিটার। মোট ৫ বছর সময়ের মধ্যে প্রায় ৪ বছর অতিক্রান্ত হল। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই টানেলের কাজ শেষ হবে বলে সেতু বিভাগের কয়েক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ১২ মিটার বৃত্তাকার এই টানেল আচ্ছাদিত অংশ পতেঙ্গা অংশে ১৯৫ মিটার আর আনোয়ারা অংশে ২৩০ মিটার।

বর্তমান সরকারের বৃহদায়তন প্রকল্পের উন্নয়ন টার্গেট অনুযায়ী, ২০২২ সালে পতেঙ্গাকে টার্নিং পয়েন্ট করতে এখন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের(চউক) দুটি ও বাংলাদেশ ব্রিজ  অথোরেটি(বিবিএ)’র একটি প্রকল্প। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমূদ্র উপকূলে গড়া এপ্রোচ সড়কে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ এর বোরিং কার্যক্রম আর চউকের ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে’র উদ্বোধন করেছেন। ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল বাংলাদেশ ব্রীজ অথরিটি(বিবিএ)’র তত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল ও চউকের অর্থায়নে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে। তবে নকশা ও সাময়িক কিছু কারনে তা পিছিয়ে গেছে আরো এক বছর। এদিকে, ২০১৯ সালের শেষে সম্পূর্ণ পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রিং রোড। যেখান থেকে পর্যটকরা তিনটি স্তরে দাড়িয়ে বসে বা হেঁটে পতেঙ্গা সমূদ্র উপকূল উপভোগ করতে শুরু করেছে।

আনোয়ারা সমুদ্র উপকূল বাসীর মতে, প্রধানমন্ত্রী এদেশের মানুষকে ক্ষুদামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে চান। এরই ফলশ্রুতিতে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মাইলফলকে পরিণত করার টার্গেট প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার। তিনি এ নিয়ে এগুচ্ছেন। আওয়ামীলীগ সরকার টানা তিনবারসহ চতুর্থবারের মত নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  আমাদের দেশকে বিশ্বের কাছে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করছেন।এখন আমাদের সরকার আর ঋণের বোঝা নিয়ে উন্নয়ন করতে চান না । এর উজ্বল দৃষ্টান্ত পদ্মা সেতু।  

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন