বাংলাধারা ডেস্ক »
নাগরিকত্ব যাচাই জটিলতায় মিয়ানমারের দূতাবাস মৃতদেহ গ্রহণ না করায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গের হিমঘরে প্রায় দশক ধরে পড়ে আছে দেশটির চার নাগরিকের লাশ। এসব মৃতদেহ সংরক্ষণের বিল জমেছে প্রায় দুই কোটি টাকা। বিল পরিশোধ জটিলতায় লাশগুলো সৎকারের ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার।
চার ব্যক্তির মধ্যে তিনজন মুসলমান, একজন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। তাদের মধ্যে কালা হোসেনের লাশ ২০১২ সালের ১২ জুন, মো. তৈয়বের লাশ একই বছরের ১৭ জুন থেকে মর্গে রাখা হয়েছে।
এছাড়া সহিমাং থো নামে এক জনের লাশ ২০১৪ সালের ২৩ মে এবং হাফেজ সিরাজ নামে অন্য ব্যক্তির লাশ ২০১৭ সালের ১৪ মে থেকে রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করতে পাঁচলাইশ থানায় জিডি করা হয়। সে অনুযায়ী কক্সবাজার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এ চার জনের মৃত্যুর পর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে লাশ রাখা হয় হিমঘরে।
পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, মিয়ানমারের এ চার নাগরিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। এ বিষয়ে কক্সবাজারে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে’ মামলা হয়েছে। তারা চিকিৎসা নিতে চট্টগ্রাম এসেছিলেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
যেহেতু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঁচলাইশ থানার আওতাধীন এলাকায়, সেহেতু লাশগুলো এ থানার জিডিমূলে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
মৃতদেহগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সুমন মুৎসুদ্দি স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরে লাশগুলো মরচুয়ারিতে থাকায় আকৃতি নষ্ট হওয়ার শেষ পর্যায়ে। জরুরিভাবে সেটি পরবর্তী কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাধানের পথে যাওয়া জরুরি।’
২০১২ সালের মারা যাওয়া কালা হোসেন ও আবু তৈয়বের বিষয়ে ওই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয় মিয়ানমার দূতাবাসে। দূতাবাস চিঠির প্রত্যুত্তরে এ দুজনের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ (জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন কার্ড) না থাকায় তাদের নাগরিকত্ব যাচাই দুরূহ জানিয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত বিধান ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানায়।
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ওই দুইজনের লাশ দাফনের জন্য ওই বছরের অগাস্ট মাসে পুলিশের পক্ষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল বলে জানান পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন।
তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১৬ অগাস্ট ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। যেখানে দুই মাসে দুই লাশের সংরক্ষণ ব্যয় বাবদ এক লাখ ৪২ হাজার টাকা বকেয়া এবং পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য দুই হাজার টাকা করে বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়।
ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ দুই জনের লাশ সংরক্ষণ ব্যয় বাবদ এক লাখ ৪২ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলেছিল। এ টাকা পরিশোধ জটিলতায় লাশগুলো সেখানে পড়ে আছে। এর সাথে পরবর্তীতে আরও দুই জনের লাশযুক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে হিমঘরে লাশ সংরক্ষণ বাবদ বকেয়া হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এ টাকা পরিশোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
মাস খানেক আগে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিঠি পেয়ে বিষয়টি কক্সবাজার জেলা পুলিশকে জানানো হয়েছে বলে জানান ওসি।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সুমন মুৎসুদ্দীর সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, ‘এটা সরকারি বিষয়। সংরক্ষণের বাবদ যত টাকা এসেছে, সেটি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েই লাশগুলোর একটি ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চিঠি দিয়েছি। এখানে দুই সরকারি সংস্থার বিষয় জড়িত। চিঠি চালাচালির মাধ্যমে একটা সমাধানের পথে আসতে হবে।’ সূত্র : বিডিনিউজ













