বাংলাধারা প্রতিবেদন »
চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা আবারও শুরু হয়েছে। টানা ১২ দিন বন্ধ থাকার পর এইসব সংবাদপত্র আজ শনিবার প্রকাশিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) দৈনিক আজাদী সম্পাদকের বাসা ঘেরাও কর্মসূচি পালনের পর পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপর আজাদীতে কর্মরত সাংবাদিকরা সিইউজে থেকে তাদের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিলে পত্রিকা প্রকাশে রাজি হন সম্পাদক।
চট্টগ্রামের সংবাদপত্রে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সাথে বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবনে গিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পত্রিকার প্রকাশনা আবারও চালুর অনুরোধ করেন। তবে বিএফইউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলোচনার মধ্য দিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।
সম্পাদকের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি, আকস্মিকভাবে পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাওয়া, পত্রিকা চালুর দাবিতে সিইউজে এবং আজাদীতে কর্মরতদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পত্রিকা বন্ধে মালিকদের অনড় অবস্থান নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে নানামুখী আলোচনা ছিল চট্টগ্রামে। স্মরণকালের মধ্যে পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা নিয়ে এমন টানাপড়েন আর দেখা যায়নি বলেও মত আসে বিভিন্ন মহল থেকে। পত্রিকা চালুর অনুরোধ নিয়ে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবনে যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশনা বন্ধ রাখার কৈফিয়ত দিয়েছে আজাদী কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ২৯ জুলাই ২০২০ তারিখে দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবনের সামনে অনভিপ্রেত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত শীর্ষস্থানীয় দৈনিকসমূহ ৩০ জুলাই থেকে তাদের প্রকাশনা বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে এই জটিলতার সম্মানজনক সমাধান হওয়ায় আজ ১৫ আগস্ট ২০২০ হতে চিটাগাং নিউজপেপার্স অ্যালায়েন্স পুনরায় পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।’
গত ১২ আগস্ট এই সভার পরদিন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, আজাদীতে কর্মরত সাংবাদিকরা সিইউজে থেকে তাদের সদস্যপদ প্রত্যাহারের বিষয়টি লিখিত দেওয়ায় তিনি পত্রিকা প্রকাশে রাজি হয়েছেন। ১৫ আগস্ট থেকে পত্রিকা পুনরায় প্রকাশের আভাসও তিনি দিয়েছিলেন।
এরপর শুক্রবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব শাবান মাহমুদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজাদী সম্পাদকের বাসায় যান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন- বিএফইউজের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী এবং সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম।
বৈঠকের বিষয়ে বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ জানান, সংবাদপত্র মালিকদের প্রতিনিধি হিসেবে জনাব এম এ মালেকের সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আলোচনার প্রেক্ষিতে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে পত্রিকা প্রকাশে সমঝোতা হয়েছে।
বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ চট্টগ্রামের সংবাদপত্র প্রকাশনায় ইউনিয়নের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বৃহত্তর আঙ্গিকে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের স্বার্থ রক্ষায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সাথে তিনি সব ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামের পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার জন্যও চিটাগাং নিউজপেপার্স অ্যালায়েন্সকে অনুরোধ জানান।
বিএফইউজে প্রতিনিধি দলে শাবান মাহমুদ ছাড়াও বিএফইউজে সহ সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম অংশ নেন। বৈঠকে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক আজাদীসহ চট্টগ্রামের পত্রিকাগুলোর ইতিহাস ঐতিহ্য ও অবস্থান তুলে ধরেন।
এদিকে প্রতিনিধিদলটি গতরাতে দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের সাথেও তার কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠক করেন। পরে প্রতিনিধিদলটি দৈনিক পূর্বকোণ কার্যালয় পরিদর্শন করে সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
দৈনিক আজাদীর সঙ্গে বাকি চার পত্রিকার প্রকাশনাও পুনরায় শুরু হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পূর্বকোণ, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ ও পূর্বদেশ। এসব পত্রিকায়ও প্রকাশনা বন্ধ রাখার বিষয়ে আজাদীর মতো ‘অভিন্ন কৈফিয়ত’ দেওয়া হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসের দাবিতে গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে সিইউজে। পরদিন থেকে পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা একযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। চারদিনের ঈদুল আজহার ছুটি বাদে ১২ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) থেকে আবারও পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়েছে। এর আগে শুক্রবার পত্রিকাগুলোর সাংবাদিক-কর্মচারিরা কাজে যোগ দেন।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













