২৬ অক্টোবর ২০২৫

বন্ধ পাটকল যাচ্ছে বেসরকারি হাতে, দের বছরেও মিলেনি শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি»

শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কেএফডি জুট মিলস বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যাচাই-বাচাই শেষে (৬ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও বিজেএমসি চেয়ারম্যানের অসুস্থতার কারণে সেই চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ পেছানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেএফডির প্রকল্পপ্রধান নুরুল আলম ভূঞা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনিটেক্স কম্পোজিট ২০টি শর্ত মেনে সরকার থেকে কেএফডি জুট মিলস মালিকানা নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, লোকসানের অজুহাতে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে ৪২টি মিলস বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে মিলস বন্ধ করার দুই মাসের মধ্যে সরকার শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে দেওয়ার কথা থাকলেও, সরকার এখনও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি। এর আগে ১৯৭২ সালে এটিকে জাতীয়করণ করা হয়। লোকসানের অজুহাতে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়; তবে ২০০৮ সালে বেসরকারি খাতে মিলটি পুনরায় চালু করা হয়।

পরবর্তী সময়ে, ২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মিলটি সরকারিভাবে চালুকরণ উদ্বোধন করেন। তবে চুক্তি স্বাক্ষর কবে নাগাদ হতে পারে এ বিষয়ে কোন তথ্য অফিসিয়ালি পাননি বলে জানান নুরুল আলম।

এদিকে জাতীয় শ্রমিক লীগ কেএফডি জুট মিলস শাখার সাধারণ সম্পাদক মো, ফজলুল করিম জানান, কেএফডি ছাড়াও দেশের আরও চারটি জুট মিলসকে দরপত্র যাচাই শেষে ইজারা দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার হাফিজ জুট মিলসও রয়েছে। বাকী তিন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস, খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস ও নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস। তিনি বলেন, কেএফডিতে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এসব শ্রমিকের মজুরি কমিশনের বকেয়া, করোনাকালীন সময়ের মজুরী ও সাধারণ ছুটির পূর্ণ মজুরী বাবদ প্রায় সোয়া ছয় কোটি টাকা পাওনা বাকী আছে।

তিনি বলেন, বিজেএমসি’র পত্র সূত্র নং ২৪.১৪.০০০০.১০৪.০২.০১৩..১৬.১৫, তারিখ ১৪.০১.২০২০ অনুযায়ী মঞ্জুরী কমিশন ২-১৫ কার্যকরী হওয়ায় ১ জুলাই ২০১৫ থেকে ২ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত একজন শ্রমিকের দৈনিক ৩শ’ টাকা মজুরী হিসেবে ৬ বছরে পাওনা ৫ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ১৬ ও ১৭ এবং চাকুরীর শর্তাবলী আইন, ধারা ৩-১১ অনুযায়ী শ্রমিকদের ৬০ দিনের নোটিশ মেয়াদের পূর্ণ মজুরী মাসিক ২৪ হাজার টাকা হিসেবে একজন শ্রমিকের পাওনা ২ মাসে ৪৮ হাজার টাকা এবং করোনাকালীন সময়ের সাধারণ ছুটির মজুরী একজন শ্রমিকের দৈনিক ৬শ’ টাকা হিসেবে ৪০ দিনের মজুরী ২৪ হাজার টাকা। সবকিছু মিলে শুধুমাত্র কেএফডি জুট মিলের এক হাজার শ্রমিকের পাওনা দাড়ায় ৬ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। তিনি বলেন, সবক’টি মিলের শ্রমিক সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশী। এসব শ্রমিকের মোট পাওনা হলো প্রায় ৪৯ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা। কর্তৃপক্ষ গরীব মেহনতি শ্রমিকদের এসব পাওনা পরিশোধ না করেই মিল হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফজলুল করিম বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী, শ্রম ও কর্ম সংস্থান প্রতিমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করেছি।

রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি এবং সিরাজগঞ্জ- ২ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপিও প্রধানমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বরাবরে সুপারিশ করেছেন। কিন্তু শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কার্যকর পদক্ষেপ কোন পক্ষই গ্রহণ করেন নি। নেয়া হয়নি পূনর্বাসনের ব্যবস্থাও। ফলে চাকুরীহারা গরীব ও মেহনতী এসব শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

উল্লেখ্য, লাগাতার লোকসানের মুখে থাকা দেশের ২৫টি জুট মিল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে ২০২১ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। এতে দেশি-বিদেশি ৫৯টি প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়। সেই দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঁচটি জুট মিল ইজারা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। কেএফডির প্রকল্পপ্রধান নুরুল আলম ভূঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষই দেখছেন। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।’

বাংলাধারা/এফএস

আরও পড়ুন